জীবনযাপন, ন্যাচারোপ্যাথি, বিশ্ব স্বাস্থ্য

প্রতিদিন কতটুকু লবণ খাবেন ?

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লবণ খাওয়ার পরিমাণ দিনে ৫ গ্রামের মধ্যে সীমিত রাখা কিডনি, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

বাড়তি লবণের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি সমস্যা, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াসহ দীর্ঘমেয়াদে কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দুনিয়াজুড়ে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এই সীমা মেনে চলায় তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে ২৩ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, লবণের পরিমাণ দিনে ৫ গ্রামে রাখতে পারলে প্রতিবছর হৃদ্রোগের কারণে ৩০ লাখ মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি তা প্রতিবছর ১২ লাখ ৫০ হাজার স্ট্রোকের পরিমাণ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিদিন এক চা চামচ পরিমাণের লবণ গ্রহন করতে পারেন, সেক্ষেত্রে খেয়াল করুন, ভাতে লবণ, সবজিতে লবণ, তরকারিতে লবণ, মাছে লবণ, মাংসে লবণ, ডালে লবণ, শাকে লবণ, ভর্তায় লবণ, রুটিতে লবণ। বিকালে নাস্তায় পুড়ি, চপ, চটপটি, রুটি, নুডুলস, সুপে লবণ, বার্গার, পিজা, চিকেনে লবণ, হালিমে লবণ ।

এবার হিসাব করে দেখুন আপনি লবণ বেশি খাচ্ছেন কি না ? আমি গড় বলতে পারি, আমরা বেশি খাচ্ছি যার জন্য হার্ট, কিডনি, রক্তচাপ সহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে আছি নয়তো হতে যাচ্ছি।

বেশি লবণ শরীরে আছে কি না তা বুঝার কিছু শারীরিক চিহ্ন রয়েছে যেমন :

ফুলে যাওয়া
দি আঙুলের আংটি খানিকটা আঁটসাঁট মনে হয়, পায়ের পাতা ফুলে যায় অথবা সকালে চোখের নিচটা ফুলে থাকে, তাহলে সম্ভবত অতিরিক্ত লবণ খাচ্ছেন আপনি। ইডিমা নামক এই অবস্থাটি সৃষ্টির কারণ হলো অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে শরীর পানি জমিয়ে রাখছে।

অতিরিক্ত পানির পিপাসা
লবণের সোডিয়াম দেহের জলীয় পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন আপনি প্রচুর লবণ খাওয়া শুরু করেন, তখন পেশি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য শরীরের আরো জলীয় পদার্থের প্রয়োজন হয়। আর এভাবেই শরীর পানি এবং সোডিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পানি খাওয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধাণ করতে হয়।

প্রস্রাবে পরিবর্তন
দেহে সোডিয়ামের আধিক্য হওয়ার প্রভাব অবধারিত ভাবে প্রস্রাবের উপরও গিয়ে পড়ে। আর তা দুটি কারণে হতে পারে: অতিরিক্ত লবণ বের করে দেওয়ার জন্য কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। যা কিডনি রোগের সূত্রপাত ঘটায় এবং বারবার প্রস্রাবের বেগ তৈরি করে। এসময় প্রস্রাবের রং একদম পরিষ্কার হয়। অন্য আরেকটি কারণ হলো, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে শরীর জলীয় পদার্থ হারিয়ে পানি-স্বল্পতা তৈরি করে। যখন পানি-স্বল্পতা লক্ষণীয় মাত্রায় পৌঁছে যায় তখন প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং ঘন ও হলুদ রং ধারণ করে।

হাড়ের ব্যথা
অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার প্রভাব আমাদের শক্ত হাড়ের উপরও পড়ে। যখন আপনি প্রচুর পরিমাণ খাবার লবণ খাবেন, তখন আপনার কিডনি তার সবটুকু শরীর থেকে বের করে দিতে পারবে না, যা ক্যালসিয়াম ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। জটিল ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হাড় দুর্বল করে দেয়, দাঁত ক্ষয় করে, এমনকি অস্টিওপোরেসিস রোগেরও জন্ম দেয়।

পেশির খিঁচুনি
পেশির সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমেই আমাদের দেহ হাঁটা-চলা, কাজ-কর্ম করার শক্তি পায়। পেশির এই সংকোচন প্রসারণের জন্য দেহে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য থাকতে হয়। অতিরিক্ত লবণ বা লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে খাওয়ার ফলাফল হিসাবে আপনার পেশির খিঁচুনি সমস্যা হতে পারে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

অবিরাম মাথাব্যথা
অতিরিক্ত সোডিয়াম খাওয়ার ফলে দেহে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, যা রক্তনালীর উপর অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে। এই চাপ যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন দিনের পর দিন মাথা ব্যথা হতে থাকে।

চিন্তা শক্তি হ্রাস পাওয়া
অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের যে সমস্যা তৈরি হয় তা মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে। এর ফলে আপনার চিন্তা শক্তি হ্রাস পেতে শুরু করবে এবং প্রতিদিনের কাজ কর্মে মনোযোগ দিতে পারবেন না। এর পাশাপাশি অনবরত পানি-স্বল্পতা স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ক্লান্তি এবং দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

তাই এখনই লবণ খাওয়ার পরিমান কমাতে হবে, সেই জন্য প্রতিদিন খাবারে ফল ও সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে শরীরে বাস করা রোগ কমে যাবেই।

আলমগীর আলম
প্রতিষ্ঠাতা, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
২৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তৃতীয় তলা, ঢাকা।

Leave a Reply