ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হলো প্যাসিভ স্মোকিং তথা সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোকিং। এই প্যাসিভ স্মোকিংয়ের মাধ্যমে একজন অধূমপায়ীও ফুসফুসের ক্যানসার, স্বরনালির (Larynx) ক্যানসার ও আপার থ্রোট (Pharynx) ক্যানসারের শিকার হতে পারেন। অর্থাৎ ধূমপায়ী শুধু নিজেকে নন, ক্যানসারের ঝুঁকিতে ফেলে দেন তার আশেপাশের সবাইকেও।
ক্যানসারের পাশাপাশি প্যাসিভ স্মোকিং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমনারি ডিজিজ (COPD) নামক ফুসফুসের রোগ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।
আরও একট বিষয়। নিশ্চয় খেয়াল করেছেন, ধূমপায়ীদের পরিধেয় পোশাক থেকে সিগারেটের উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। ধূমপায়ীদের পোশাকে শুধু এই গন্ধই নয়, তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবও রয়ে যায়। ধূমপানের সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটি হলো, এটা খুব দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু ধূমপায়ীর চারপাশে, তার ত্বকে, পোশাকে এর ক্ষতিকর প্রভাব রেখে যায়। যা থেকে ক্ষতি হতে পারে তার সংস্পর্শে আসা অধূমপায়ী ব্যক্তিদের।
প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে কারা?
ধূমপায়ীদের আশেপাশের সকলেই এর ঝুঁকিতে থাকে। একদম শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সকলেই প্যাসিভ স্মোকিং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে থাকে শিশুরা।
হামাগুড়ি দিতে পারে এমন শিশুদের শরীরে খুব সহজেই ধূমপানের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার শুরু করে এবং ক্ষতিকর উপাদান শোষিত হয়। প্যাসিভ স্মোকিং এর ভয়াবহতার ফলে শিশুদের মাঝে শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন, শ্বাসকষ্ট, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের পাশাপাশি সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রম (SIDS) বা কট (COT) ডেথ এর সম্ভবনাও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ঘুমের মাঝে কোন নির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত হুট করেই শিশুর মৃত্যু ঘটে।
কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয় প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ফলে?
একজন ধূমপায়ী যতখানি ক্যানসার তৈরিকারী উপাদানের সংস্পর্শে আসে, অধূমপায়ীও সমপরিমাণ ঝুঁকিতে থাকে। জেনে রাখুন, সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়কে Class-A Carcinogen (ক্যানসার তৈরিকারী উপাদান) হিসেবে ধরা হয়। কোনভাবেই এই বিষয়টি নিরাপত্তার সীমানায় আসবে না। এখানে প্যাসিভ স্মোকিংয়ের কয়েকটি স্বাস্থ্যহানীর বিষয় তুলে ধরা হলো।
ফুসফুসের ক্যানসার
স্বাভাবিকভাবেই প্যাসিভ স্মোকিংয়ের প্রধান ফলাফল হিসেবে আসবে ফুসফুসের ক্যানসার। ধূমপায়ী ব্যক্তির সাথে বসবাস করা অঅধূমপায়ীর ফুসফুসের ক্যানসার দেখা দেওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায় ২০-৩০ শতাংশ।
অন্যান্য ক্যানসার
প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ফলে ফুসফুসের ক্যানসারের পাশাপাশি নেক ক্যানসার, ব্লাডার ক্যানসার, কিডনি ক্যানসার, খাদ্যনালীর ক্যানসার, পরিপাকতন্ত্রের ক্যানসার এবং Acute Myelogenous Leukemia (AML) দেখা দেওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়। ২০১৮ সালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, চীনে সার্ভিক্যাল ক্যানসার দেখা দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে প্যাসিভ স্মোকিংকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হৃদরোগের সম্ভবনা
শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর প্যাসিভ স্মোকিং থেকে হৃদরোগের ফলে মারা যান ৩৪,০০০ জন এবং স্ট্রোকের ফলে মারা যান ৮০০০ জন। সময়ের সাথে যে সংখ্যাটি বৃদ্ধি পাচ্ছে সমানভাবেই। প্যাসিভ স্মোকিং হৃদরোগের ঝুঁকি ২৫-৩০ শতাংশ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে।
গর্ভকালীন জটিলতা
গর্ভাবস্থায় প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ফলে মিসক্যারেজ, স্টিলবার্থ ও স্বল্প ওজনের শিশু জন্ম নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এছাড়া ধূমপায়ী বাবা, ধূমপায়ী মা ও প্যাসিভ স্মোকিং মায়ের ফলে গর্ভস্থ শিশুর হৃদরোগের সম্ভবনা তৈরি হয়।
দেখা দেয় বিষণ্ণতা
অনেকেই হয়তো এই বিষয়টি সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন। কিন্তু চলতি বছরের একটি বিষদ গবেষণার তথ্য বলছে, সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোকিংয়ের ফলে ৫৭ শতাংশ ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা তৈরি হয়।
এখানে তো গুটি কয়েক ক্ষতিকর দিকের কথা তুলে ধরা হলো। আদতে প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ক্ষতির মাত্রা আরও অনেক বেশি। যার সবচেয়ে চূড়ান্ত ও ভয়াবহ রূপ হলো ক্যানসার দেখা দেওয়া।
তাই প্রথমেই ধূমপায়ীদের নিজ থেকে সতর্ক হতে হবে। সচেতন হতে হবে। নিজের পরিবারের মানুষদের সুস্বাস্থ্যে কথা বিবেচনা করে হলেও, এই বাজে অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে। নতুবা নিজের সাথে সাথে প্রিয় মানুষদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাঝে পরে যাবে খুব সহজেই।