সরাসরি প্রথম আলো থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পেঁয়াজ একটি সর্বজন পরিচিত কন্দমূল। সূর্যের কিরণ বিশেষভাবে গ্রহণ করতে পারে বলেই এর পাতা গাঢ় সবুজ। পেঁয়াজ প্রাকৃতিকভাবে ভেষজগুণের আধার; বাংলার ঘরে ঘরে এটি কাঁচা যেমন খাওয়া হয়, তেমনি রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে। পেঁয়াজের সবুজ গাছ ও কলি আমরা রান্না করে খেয়ে থাকি। তবে এই কলি সামান্য লবণ মাখিয়ে চিবিয়ে রস খেয়ে ছিবড়া ফেলে দিলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।
পেঁয়াজে আছে ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), বি২ (রিবোফ্লাবিন), বি৩ (নিয়াসিন), বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড), বি৬, বি৯ (ফোলেট) ও ভিটামিন সি। পেঁয়াজ শরীরে শক্তি জোগায়, বিভিন্ন ভিটামিনের গুণ দিয়ে দেহকে সাবলীল রাখতে কাজ করে, হার্টের কার্যক্ষমতা ও কার্ডিভাসকুলার ফাংশন ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করে।
নানা রোগের প্রতিকার হিসেবে পেঁয়াজ ব্যবহার হয়ে থাকে; যেমন:
সর্দি–জ্বর: শরীর গরম, কপাল ভার, নাক বন্ধ, মনে হয় জ্বর আসছে। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস নাকে একটু টানলে সর্দি বেরিয়ে যাবে এবং জ্বর ভাবও চলে যাবে।
হার্টের সমস্যা: যাঁদের কার্ডিভাসকুলার ফাংশনে সমস্যা আছে, তাঁরা প্রতিদিন দুই চা–চামচ পেঁয়াজের রস খেলে সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটবেন, আর নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা হবে না। হার্টের সমস্যায় প্রতিদিন খাবারের আগে সালাদ খাওয়া উত্তম অভ্যাস, এই সালাদে একটি বড় উপাদান পেঁয়াজ থাকা জরুরি।
চোখের জ্যোতি ঠিক রাখে: নিয়মিত পেঁয়াজের রস খেলে যাঁদের দৃষ্টির সমস্যা আছে, তাঁদের সেরে যাবে (বয়সজনিত ক্ষীণ দৃষ্টি ছাড়া)।
অ্যাজমার সমস্যা: যাঁদের অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত দুবেলা এক চা–চামচ করে পেঁয়াজের রস খেলে অ্যাজমার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। বিশেষ করে রাতে শোবার আগে এক কাপ গরম পানিতে এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদের গুঁড়া, এক চা–চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমাজনিত সমস্যার উপকার পাবেন।
মল অপরিষ্কার হলে: এক টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস, সমপরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে পান করলে পেট পরিষ্কার হবে। এটা দুপুরের খাবারের পরে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
প্রস্রাব ধারণক্ষমতা বাড়াতে: প্রস্রাবের বেগ হলে আর দাঁড়ানো যায় না, দেরি হলে বেসামাল হয়ে কয়েক ফোঁটা বেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ১ চা–চামচ পেঁয়াজের রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে রাতে শোবার আগে খেতে হবে। ৪ সপ্তাহ খেলে প্রস্রাবের ধারণক্ষমতা বাড়বে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে: শরীর গরম হয়ে অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। পেঁয়াজের রস নাকে টানলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।
অর্শ: অর্শের কারণে রক্ত পড়তে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ১ চা–চামচ পেঁয়াজের রস সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। দুপুরে সবজি, সালাদে পেঁয়াজসহ খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমতে থাকবে এবং পায়ুপথের যেকোনো সমস্যাই সমাধান হতে থাকবে।
অত্যধিক গরমে: প্রচণ্ড গরমে পিপাসা পেলে হঠাৎ পানি পান করলে সর্দি হয়। এ সময় খাবার অথবা সালাদের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে পিপাসা কম লাগবে এবং পথেঘাটে হিটস্ট্রোকের ভয় থাকে না।
হেঁচকি উঠলে: ১ চা–চামচ পেঁয়াজের রস ২ চা–চামচ পানি মিশিয়ে ২-৩ বার একটু একটু করে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হবে।
কানে পুঁজ: অনেক সময় বাচ্চাদের কানে ঘা হয়ে পুঁজ হয়; এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস একটু গরম করে ২-১ ফোঁটা কানে দিলে ঘা সেরে যায়। আয়ুর্বেদ নিয়মানুসারে, এটা কানের জন্য অব্যর্থ ওষুধ।
বমি বমি ভাব বা বমি হলে: ৪-৫ ফোঁটা পেঁয়াজের রস ১ কাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে বমি বন্ধ হবে।
বিষফোড়া ফাটাতে: যেকোনো জায়গায় হোক না কেন, ফোড়া টন টন করছে, কিন্তু ফাটছে না। পেঁয়াজের রস একটু গরম করে লাগিয়ে দিলে ওই বিষফোড়া ফেটে যাবে।
মাথাধরায়: সর্দি–জ্বরে মাথাব্যথা হলে ২-৩ ফোঁটা পেঁয়াজের রস নাকে টানলে তৎক্ষণাৎ মাথাধরা এবং ব্যথা কমে যাবে।
মুখে ইনফেকশন: মুখের ভেতর এবং দাঁতের অনেক রোগ ও ইনফেকশন থাকলে তা থেকে বাঁচা যায়, যদি প্রতিদিন ১-২টি করে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
কোমড় ও ঘাড়ের ব্যথায় ম্যাজিক চিকিৎসা, বিনা খরচে নিজে নিজে করার নিয়ম। By Alamgir Alam
পেঁয়াজের গন্ধ কমাতে
মানুষের শরীরের যে ছয়টি রসের প্রয়োজন (নোনতা, মিষ্টি এবং টক), তার মধ্যে পেঁয়াজ ৩টি দিতে পারে। কিন্তু একটু বেশি ব্যবহার করলে মুখে গন্ধ, নিশ্বাসে গন্ধ থেকে যায়; ফলে মানুষের মধ্যে কথা বলার সময় অস্বস্তি বোধ হয়। এই গন্ধ তাড়ানোর জন্য পেঁয়াজকে চার ভাগ করে সারা রাত টক দইয়ে ভিজিয়ে রাখলে গন্ধ কমে এবং গুণ যোগ হয়ে এক অমূল্য খাদ্যদ্রব্যে পরিণত হবে।
পেঁয়াজ দিয়ে আপনি উপকার পেতে হলে কাঁচা খাওয়াই জরুরি, অথবা রস করে খেতে পারেন। আমরা সাধারণত রান্নায় যে পেঁয়াজ খাই, তা দিয়ে উপকার হলেও ঔষধি গুণের উপকার পাওয়া যাবে না। তাই প্রতিদিন পেঁয়াজসহ সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শরীর সুস্থতা থাকবে, কোনো রোগে আক্রান্ত থাকলে সেটাও নিরাময় হবে।
লেখক: খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ