জীবনযাপন, ন্যাচারোপ্যাথি

মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ভয়কে জয় করবেন কীভাবে?

আমাদের মানব জীবন সব সময় নানা রকম অনুভূতি নিয়ে ঘেরা থাকে। সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার পাশাপাশি আমাদের মনের মধ্যে আরও একটা অনুভূতি কাজ করে যেটার নাম ভয়।ভয়ে এমন একটা জিনিস এটা যে কোন কিছু থেকে আসতে পারে। কেউ কোনো বস্তু থেকে ভয় পেতে পারে, কেউ কোনো ঘটনা থেকে ভয় পেতে পারে। কেউ আবার কোন কথা থেকে বা পুরনো স্মৃতিচারণ দেখে ভয় পায়।

অনেক সময় এটা হয়ে থাকে যে কেউ হয়তো নতুন কোন কাজে যোগদান করতে যাচ্ছে তো আমরা বলি যে সে নার্ভাস। এই নার্ভাসনেস আসলে ভিতর সুপ্ত কোন ভয় থেকে আসে যা নিয়ে আমরা অবচেতন মনে বা সচেতন মনে চিন্তিত থাকি। অনেক সময় কাজের জায়গায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এমন কোন কাজ দেয় বা কাজের কথা বলে যেটা শুনে আমরা ভীত হই। কখনো আবার ছাত্রাবস্থায় থাকাকালীন পরীক্ষার সময় একটা বুঝি চলে আসে সে প্রস্তুতি যতটাই ভালো হোক না কেন।

আসলে লক্ষ্য করে দেখা গিয়েছে যে কোন জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে বা কোন জিনিস সম্পর্কে যদি জ্ঞানের অভাব থাকে বা কোন জিনিস সম্বন্ধে যদি নিজস্ব অভিজ্ঞতার অভাব থাকে তবে ভয় ভিতরে আসে।

কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রে হোক বা ছাত্রাবস্থায় এবং নিজের সফলতা আনার জন্য এই ভয় কে কাটিয়ে ওঠা জরুরি। কিন্তু মুখে এই কথাগুলো অনেকে আসার সময় ভিতরের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেন না। ফলে অনেক সময় ব্যর্থতার শিকার হতে হয় বা মানসিক অবসাদের শিকার হতে হয়।

আজকের আলোচনায় আমরা এটাই জানানোর চেষ্টা করব যে কি করে নিজের ভিতরে ভয় কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।

১. কী কী ধরনের ভয় :
ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য আগে আমাদের জানতে হবে যে আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কী ধরনের ভয় সচেতন বা অবচেতন মনে পেয়ে থাকতে পারি। সাধারণ চোখে বিশ্লেষণ করলে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের জীবনে এই ভয় গুলোর মুখোমুখি হয়; –
হেরে যাওয়ার ভয়,
মৃত্যুর ভয়,
লোকজনের সামনে কথা বলার ভয়,
অবসাদ জনিত ভয়,
পরীক্ষার ভয়,
পড়ে যাওয়ার বা ডুবে যাওয়ার ভয়,
প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয় এই ভয় গুলোকে ঠিক কিভাবে কাটানো যাবে তা বলা ভালো কিভাবে এই ভয় গুলোর মুখোমুখি হয়ে ভয় কে জয় করা যাবে সেটা জানানোর ছোট্ট প্রচেষ্টা নিচে করা হলো।

১. অতীতকে ঝেড়ে ফেলুন: অনেকেই আছে যারা পুরনো ঘটনাকে মনে করে বা কোন এক সময় কি হয়েছিল তাদের সাথে সেই নিয়ে অযথা অতিরিক্ত ভেবে ভীত হয়ে থাকেন। মনুষ্যত্ব ভিতরে মনে করেন যে আমাদের সবসময় পুরনো জিনিসকে ঝেড়ে ফেলা উচিত। যত পুরনো জিনিস কে সঙ্গে নিয়ে চলা হবে ততো অযথা ভয়ের কারণ তৈরি হতে থাকবে।অনেকেই বলেন পুরনো জিনিস কে নিয়ে চলা ভালো তার কারণ তার থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায় এবং শিক্ষা পাওয়া যায় যাদের নতুন করে কোনো ভুল না হয়।কথাটাই কিছুটা ভুল কারণ যারা এ কথা বলেন তারা আসলে পুরনো অতীতকে টেনে নিয়ে যেতে বলেন না, তারা আসলে বলতেছেন পুরনো অতীত থেকে সঞ্চয় করা অভিজ্ঞতা নিয়ে এগিয়ে চলার জন্য। কিন্তু অনেক সময় আমরা এর সঠিক মর্ম বুঝতে না পেরে পুরনো জিনিস কে নিয়ে চলতে থাকি এবং যার জন্য সামনে আসার যে কোন ঘটনার সাথে তার অল্পমাত্র সাদৃশ্য পেলেও আমরা অযথা ভীত এবং চিন্তিত হয়ে পড়ি।

২. অবসাদকে না বলুন: অনেকে কাজ নিয়ে বা কর্মক্ষেত্র নিয়ে বা সাংসারিক এবং মানসিক দুশ্চিন্তা নিয়ে অবসাদগ্রস্ত থাকেন। সময় বলা হয়ে থাকে যে অবসাদ কে না বলুন।কারণ যত আপনি অবসাদ নিয়ে চিন্তা করবেন তত আপনি না চাইত অহেতুক দুশ্চিন্তার এক ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে পড়বেন। না চাইতেও এই দুশ্চিন্তা বারবার আপনাকে টেনে ধরবে। আর যেহেতু আমাদের মস্তিষ্ক একই সময় শুধুমাত্র একটা জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে পারে না, একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনা আছে বারবার যুক্ত করতে চায় বার সংযোগ স্থাপন করতে চায় তাই বারবার নানা ধরনের দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়ে আপনি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন কিন্তু সঠিক উত্তর আপনি পাবেন না আপনার ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। তাই অবসাদ কে না বলুন এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটা নির্দিষ্ট সমস্যা ভালো করে ভেবে তার সমাধান বের করার চেষ্টা করুন।

৩. অহংকার সরান : মানতে না চাইলেও আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে ভয়ের আরেকটা অন্যতম কারণ হলো এই অহংকার বোধ। যখন আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত উপার্জন আসে তখন আমরা ভয় পেতে থাকি যে কোন কারণে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হব না তো। নতুন কোনো ভালো চাকরি পাই তখন এই বিষয়ে ভয় পাই যে এই চাকরি কোন ছোট্ট ভুলের জন্য চলে যাবে না তো।পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট করলে আমাদের মধ্যে এই ভয়ে চলে আসে যে আজ থেকে ভাল রেজাল্ট করেছে কালকে একটু কম পড়া যদি হয়ে যায় তার জন্য রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে নাতো বা রেজাল্ট খারাপ হয়ে গেলে বাড়ির লোক কি বলবে! এই সময় এত দুশ্চিন্তা আমাদেরকে ভিতরে ভিতরে ভীত করতে থাকে। তাই সময় থাকতে নিজের মধ্যে তার অহংকার বোধ কে সরিয়ে রাখুন।

৪. ধ্যান করুন: অহংকার বোধ ট্যাগ করা হোক বা নিজের মধ্যে কার অবসাদ বোধ সরিয়ে রাখা হোক, এসবের জন্য দরকার মনের একাগ্রতা। আর মনের একাগ্রতা বাড়ানোর এক এবং অদ্বিতীয় সমাধান হচ্ছে ধ্যান করা। যোগাযোগের সাইট প্রাচীনকাল থেকেই মুনি-ঋষিরা এই ধ্যানকে নির্ভর করে এসেছেন। ধ্যান যে শুধু আমাদের অবসাদ, অহংকার কে সরিয়ে রাখে তা নয়, সাথে আমাদের মনের একাগ্রতা বাড়িয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করে কারণ ধ্যান আমাদের দূরদর্শিতা বাড়িয়ে তোলে। তাই অহেতুক মানুষিক স্থিতিসংকুলান যাতে নড়বড়ে না হয় তার খেয়াল রাখে। একই সাথে প্রাণায়াম শরীরকে এবং মনকে সতেজ রাখে। আমাদের দেহের ভিতর পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন হলে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিমাণ মতো অক্সিজেন পাওয়ার সুবাদে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। ফলে অভ্যন্তরীণ ভীতি কাটতে থাকে সহজেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *