ন্যাচারোপ্যাথি, পত্রিকায় প্রকাশিত, স্বাস্থ্য টিপস্‌

ভিটামিন বি–ওয়ান বা থায়ামিনের অভাবে যা হতে পারে | আলমগীর আলম

ভিটামিন বি–ওয়ান বা থায়ামিন ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের একটি উপাদান। এর প্রয়োজন রয়েছে শরীরে।

থায়ামিন, যা ভিটামিন বি–ওয়ান নামেও পরিচিত, শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। বি ভিটামিন একটি কমপ্লেক্স, যা আটটি ভিটামিনের সমন্বয়। কমপ্লেক্স হওয়ার কারণে সব কটি ভিটামিন একসঙ্গে খাওয়া জরুরি। এটি শরীরকে শক্তি হিসেবে কার্বোহাইড্রেট হজমপ্রক্রিয়ায় কাজ করে, যা হজমশক্তিকে আরও সক্রিয় ও সক্ষম করে তোলে। কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও প্রোটিনকে শক্তিতে বা গ্লুকোজে রূপান্তর করতে সাহায্য করে; কিন্তু কোনো কারণে এই কমপ্লেক্সের কোনো একটির ঘাটতি হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে গ্লুকোজ বিপাক এবং স্নায়ু, পেশি আর হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন বি–ওয়ান জরুরি; একে থায়ামিনও বলে। মানুষের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত বি ভিটামিন না থাকলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ভিটামিন বি–ওয়ান পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যায়। অবশ্য শরীর ভিটামিন ব্যবহার না করলে এটি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এটা সচরাচর ঘটে শরীরে ভিটামিন বি–ওয়ান প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হওয়ার ক্ষে্ত্রে।

প্রতিদিন ভিটামিন বি–ওয়ান গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বয়স ও লিঙ্গের ওপর নির্ভর করতে পারে। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাধারণত ১.২ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সাধারণত ১.১ মিলিগ্রাম প্রয়োজন হয়।

মানুষ প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি–ওয়ানের প্রায় অর্ধেক খাবার থেকে গ্রহণ করে যা প্রাকৃতিকভাবে থায়ামিন ধারণ করে, বাকিটা আসে এমন খাবার থেকে যা প্রস্তুতকারকেরা ভিটামিন দিয়ে শক্তিশালী করে। যদিও আমাদের দেশে এ ধরনের কাজ হয় না; যা উন্নত বিশ্বে সাদা ময়দা বা আটার সঙ্গে ভিটামিন বি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোজন করা হয়ে থাকে।

থায়ামিনের গুরুত্ব

• শক্তি উৎপাদন: থায়ামিন শরীরের কোষগুলোকে গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে।
• স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য: এটি স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
• হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়: থায়ামিন হৃদ্‌পেশির স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

থায়ামিনসমৃদ্ধ খাবার কেন খাবেন?

একটি সুস্থ ও সুষম খাদ্যতালিকায় থায়ামিনসমৃদ্ধ খাবার অন্তভু৴ক্ত করা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শক্তিস্তর বাড়াতে, মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন বি–ওয়ানের উৎস

• প্রোটিন (গরুর মাংস)
• বাদাম, গম
• ডিম, সামুদ্রিক মাছ
• মটরশুটি, মুগ ডাল, ছোলার ডাল, মসুর ডাল
ভিটামিন বি–ওয়ান ধারণকারী ফল, শাকসবজি ও শস্য
• ফুলকপি, ব্রোকলি, আলু
• কমলা, কলা
• সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়োর বীজ

থায়ামিনের অভাব থাকলে যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে

ভিটামিন বি–ওয়ানের অভাব সাধারণত কিছু  সমস্যা সৃষ্টি করে, এটি এমন এক অবস্থা যা পেরিফেরাল স্নায়ু এবং হাড়ক্ষয়ের সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া অন্যান্য কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:

• বর্ধিত হৃদ্‌যন্ত্র বা ট্যাকিকার্ডিয়া
• শ্বাসকষ্ট
• পেশি দুর্বলতা
• খিঁচুনি
• বমি
• অ্যানোরেক্সিয়া
• পা ও শরীর ফোলা
• ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া
• মাংসপেশির দুর্বলতা
• মনোযোগে ঘাটতি
• পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (হাত ও পায়ে ঝিনঝিনানি)

বি–ওয়ানের অভাবের ঝুঁকি কাদের?

থায়ামিনের ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে

• গর্ভাবস্থা
• দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা
• অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ
• মদ্যপান
• ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি
• দীর্ঘস্থায়ী মূত্রবর্ধক থেরাপি নেয় এমন ব্যক্তিরা
• দীর্ঘস্থায়ী, চিকিৎসা না করা থায়ামিনের ঘাটতির ফলে ওয়ার্নিকে-কর্সাকফ সিনড্রোম হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী মদ্যপান, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারে।
• বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন বি১ এর ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।

ভিটামিন বি–ওয়ান যে জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে

• স্নায়ুতন্ত্র জটিল সমস্যা হতে দেয় না

• মস্তিষ্ক সক্রিয়া রাখে
• পেশি সবল রাখে
• হার্টের পাম্প ব্যবস্থা ঠিক রাখে
• পেটের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে
• অন্ত্র তার চুল্লি সচল রাখে
• পেশি ও স্নায়ুকোষের ভিতরে এবং বাইরে ইলেক্ট্রোলাইট প্রবাহের সঙ্গেও জড়িত।
যাদের ভিটামিন বি–ওয়ান কমে যায়, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, মস্তিষ্কের বাইরে স্নায়ুর প্রদাহ হয়, তাঁদের চিকিৎসার জন্য থায়ামিনের বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রমাগত ডায়রিয়া এবং ক্ষুধা কম থাকা ব্যক্তিদেরও থায়ামিনের প্রয়োজন হতে পারে। কোমায় থাকা কারও থায়ামিন ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।

বিশেষ ক্ষেত্রে থায়ামিন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে

• ম্যালঅ্যাবসর্পশন সিনড্রোম
• গুরুতর, দীর্ঘস্থায়ী বমি
• গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি
• রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি
• হাইপারথাইরয়েডিজম

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

যদি কোনো কারণে থায়ামিন শরীরে বেশি হয়; কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব থেকে বের না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে— বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, অ্যালার্জির লক্ষণগুলোও দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে শ্বাস নিতে অসুবিধা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং গলা শক্ত হয়ে যাওয়া। এই লক্ষণগুলো হলে জরুরি চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

 

মনে রাখবেন
বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থায়ামিনের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও গ্রহণ করুন। খাবার উঁচু তাপমাত্রায় বা দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করলে থায়ামিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মানুষের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার জন্য তাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত ভিটামিন বি১ প্রয়োজন। থায়ামিনের অভাব বিভ্রান্তি, পেশি দুর্বলতা এবং হৃদ্‌রোগের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যারা তাদের খাদ্যতালিকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে থায়ামিন পেতে অক্ষম, তাদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে থায়ামিন সম্পূরক খেতে পারেন।

লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

ছবি: পেকেজলসডটকম