ন্যাচারোপ্যাথি, ফল

পেয়ারার উপকারিতা

কটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা দেহের ভেতরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে।      

পেয়ারার শরীরে এত মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং আরও সব উপকারি উপাদান উপস্থিত রয়েছে যে, তা শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।   

সে সঙ্গে হাই ব্লাড প্রসারের কারণে আরও নানাবিধ রোগ যাতে মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। আমাদের দেশে যে হারে হাই ব্লাড প্রেসার এবং অন্যান্য নন- কমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে প্রত্যেকেরই যে পেয়ারা খাওয়ার প্রয়োজন বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!

প্রসঙ্গত, অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন সি’র মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে একদিকে যেমন স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, ঠিক তেমনি ব্লাড ভেসেলের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। শুধু তাই নয়, একাধিক উপকার পাওয়া যায়। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে, পেয়ারায় প্রচুর মাত্রায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’। তাই তো ডায়েটে আপাত ‘নন-এক্সপেনসিভ’ এই ফলটিকে জায়গা করে দিলে একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়।   

১. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:

প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এ থাকার কারণে নিয়মিত পেয়ারা খেলে দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং গ্লকোমার মতো রোগও দূরে থাকে।  

২. কিডনির ক্ষমতা বাড়ে:

একাধিক গবেষণার পর একথা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যে তার প্রভাবে কিডনির ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে, শরীরের কিডনি সংক্রান্ত কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

৩. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:

শরীরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম লেভেল ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় পেয়ারা। শুধু তাই নয়, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য় করে এই ফলটি। তাই যাদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা নিয়মিত পেয়েরা খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন উপকার মিলবে।   

৪. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:

পেয়ারায় উপস্থিত ভিটামিন বি-৩ এবং বি-৬ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেনের কগনেটিভ ফাংশন, অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি এবং মনোযোগের উন্নতি ঘটে।  

৫. ত্বক ফর্সা হয়:

অল্প পরিমানে পেয়ারার খোসা নিয়ে তার সঙ্গে ডিমের কুসুম মিশিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মুখটা। এইভাবে সপ্তাহে ২-৩ ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন ত্বক ফর্সা এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।

৬. ডায়াবেটিসের মতো রোগ দূরে পালায়: 

পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই ফলটি যেহেতু গ্লাইকেমিক ইনডেক্সে একেবারে নিচের দিকে আসে, তাই পেয়েরা খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা নিশ্চিন্তে এই ফলটি খেতে পারেন।

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:  

আপনাদের কি জানা আছে পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে এতটা মজবুত করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও ধরনের রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। এখানেই শেষ নয়, নানা ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও ভিটামিন সি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো একেবারে ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের পেয়ারা খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

৮.কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমে:   

শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে থাকলে পেটের রোগ যেমন কমে, তেমনি কনস্টিপেশনের মতো সমস্যাও দূরে পালায়। আর ফলের দুনিয়ায় পেয়ারায় মধ্যেই রয়েছে সব থেকে বেশি মাত্রায় ফাইবার। তাহলে আজ থেকেই পেয়ারাকে রোজের সঙ্গী বানান। দেখবেন কষ্ট একেবারে কমে যাবে। 

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধ :

মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো রোগকে থামাতে পারে একমাত্র প্রকৃতি। কারণ প্রকৃতির অন্দরেই রয়েছে সেই শক্তি, যা আমাদের ক্যান্সার রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে। যেমন পেয়ারায়, এতে আছে লাইকোপেন, কুয়েরসেটিন, ভিটামিন সি এবং পলিফেনল শরীরে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেস্ট এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারার কোন বিকল্প হয় না। 

Leave a Reply