শিম খেতে তো ভাল লাগে, এটি স্বাদে মিষ্টি কিন্তু খাওয়ার পর পরিপাকে শিম অম্ল বা টক রস উৎপন্ন করে। অনেকের মতে শিম খেলে শরীরের বল বাড়ে, মল পরিষ্কার হয়। কিন্তু সহজে পরিপাক হয় না বলে বায়ু সৃষ্টি করে। শিম শরীরের ভেতরের বিষ নষ্ট করে। কিন্তু সেই সঙ্গে দৃষ্টি শক্তির তেজ কমিয়ে দেয় বলেও অনেকের ধারণা।
শিমের ভেষজ গুণাগুণ:
১. বাত দূর করতে : অনেকে বলেন বেশি শিম খেলে বাত হয় অর্থাৎ শিম বাতল বা বাত-ব্যাধি কারক। কিন্তু শিমের তরকারি যদি রসূন ফোড়ন বা রসুন বাটা দিয়ে রান্না করা যায় তাহলে শিমের এই দোষ আর থাকে না। রসুনের গুণেই বাতব্যাধির আশঙ্কা দূর হয়। সাদা শিম শরীরে বাত ও কফ সৃষ্টি করলেও বিষ নাশ করে। হলদেটে রঙের শিম সবচেয়ে বেশি উপকারী।
২. বায়ু দুর করে: শিম, পরিপাকে মধুর, শীতল অথাৎ শরীর ঠাণ্ডা করে, ভারি অথাৎ গুরুপাক, বলপ্রদ বা বলদায়ক, দাহক, কফকারক বা কফ বৃদ্ধি করে, বাহল অধৎ বাত ব্যাধিকারক, কিন্তু বায়ু ও পিত্ত দূর করে। ঘন সবুজ রঙের চওড়া শিম বায়ু দূর করে, গরিষ্ঠ বা গুরুপাক, শরীর গরম করে, কফ ও পিত্ত বাড়িয়ে তোলে, বীর্য হ্রাস করে, খিদে কমিয়ে দেয়, মলরোধ করে, ভারি কিন্তু রুচিকারক।
৩. রুচি বাড়ায়: বড় আকারের শিম রুচিকর, বাতল, অগিদীপক অথাৎ খিদে বাড়ায় এবং মুখের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। কালচে রঙের শিম স্বাদে কষায়, পরিপাকে মধুর, রুচিকর, খিদে বাড়ায় এবং মল রোধ করে।
৪. বিছের কামড় আরাম: বিছে কামড়ালে শিম পাতার রস লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
৫. বুকের দুধ বাড়ায়: অনেকে বলেন শিম মল রোধ করে আবার অনেকের মতে মল নিঃসারণ করে। অনেকের মতে শিম খেলে গ্যাস বৃদ্ধি হয়। কিন্তু শিমের একটি বিশেষ গুণ হল স্তন্যবর্ধন করা । স্তন্যবর্ধক হিসেবে শিম মেয়েদের কাছে আদরণীয়। যে সব মেয়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান শিম খেলে তাঁদের বুকের দুধ বাড়বে।
আয়ুর্বেদ মতে, শিম গুরুপাক, শৈত্যগুণসম্পন্ন, পিত্তনাশক, কোষ্ঠ বায়ুপ্রকোপক, কটু ও মধুররসাঙ্কিা , অগ্নি, বল ও শুক্রক্ষয়কর এবং ব্রণ, জ্বর ও শ্বাস রোগকর। আরও বলা হয় যাঁদের হজম শক্তি দুর্বল তাঁদের পক্ষে শিম না খাওয়াই ভাল।
এ গাঢ় সবুজ রঙের শিমের চেয়ে সাদা শিম পথ্য হিসেবে ভাল। বলা হয় সাদা শিম শ্লেষ্ম, বাত, পিত্ত ও ব্রণদোষ নাশ করে। চুন ও শিম পাতার রসের প্রলেপ লাগালে কানের লতির বা কর্ণমূলের ফোলা সারে এবং গলায় প্রলেপ লাগালে গলার ব্যথা কমে।
শিমের তরকারি রান্না করে খাওয়া যায় শিম বেশি পেকে গেলে শিমের বীজের ডাল রান্না করেও খাওয়া যায়। যোয়ান ফোঁড়ন দিয়ে রান্না করা শিমের তরকারি খেতে অতি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। শিম বায়ুকারক। শিমের তরকারি তেল দিয়ে রান্না করলে এই দোষ খানিকটা কমে।
পুষ্টিগুণ: শিমে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, গন্ধক আর লোহা আছে। ভিটামিন এ বেশিমাত্রায় এবং ভিটামিন সি অল্পমাত্রায় আছে । ফ্রেঞ্চ বিন বা ফরাসবিনের চেয়ে শিমের পুষ্টিমূল্য বেশি
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,১১৬-১১৭।