আমাদের দেশে প্রতিবছর গরমের সময় শিশুদের প্রচন্ড জ্বর হয়, এর মধ্যে বেশ কিছু শিশু মারা যায়, এই শিশু মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় অজ্ঞাত রোগ কখনও ডেঙ্গু, টাইফয়েড বলে ধারণা করা হয়। এই শিশু মৃত্যুতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে কিন্তু প্রতিবছরই এমন পরিনতি উপস্থিত হয়, এবং বলা হয়, আগে বেশি ছিলো, এখন কমে এসেছে।
এই জ্বরের একটি নাম Acute Encephalitis Syndrome যার লক্ষণ প্রচন্ড জ্বর, বমি হওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, প্রলাপ বকা, ব্রেণের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া ও চরম দুর্বল হয়ে যাওয়া। এই রোগের ল্যাবটারি টেষ্টে আরও কয়েকটি নাম সামনে আসে যেগুলোকে
- Progressive Encephalitis Syndrome
- Chronic Encephalitis Syndrome
- Acute Encephalitis Syndrome
ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা হয়, এর বাহিরেও এই সিন্ডমের আরও কয়েকটি নাম আছে সেগুলোও নামে আসে, এতে এতো বড় বড় নামের কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পরে, মনে হয়, না জানি কি কঠিন রোগে শিশু আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আসলে যে নামেই এই রোগে নাম করণ হউক না কেন তার মূলে রয়েছে ব্রেণে ইনফ্লামেশন, অর্থাৎ ব্রেণে একধরণের ঘা।
ঘায়ের কারণ কি ? এটাকি ব্যাকটেরিয়া রিজন, প্যাথাজন রিজন নাকি অটো ইউমিউন রেসপন্স ? যে কারণেই হোক না কেন এটা মূলত সিম্পটম (উপসর্গ) একই ধরণের হয়ে থাকে। প্রচন্ড জ্বর, বমি হওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, প্রলাপ বকা, ব্রেণের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া, মেমোরি লস হওয়া (চেনা মানুষকে চিনতে না পারা একটি লক্ষণ) হেলসুলেশন ও চরম দুর্বল হয়ে যাওয়া। এটা কোন সাধারণ ফ্লু না কারণ এটা জ্বরের সাথে ব্রেণের সম্পর্ক থাকায় নিউরোলজিকাল সমস্যা তৈরি হয়।
রোগটি কেন হয় ?
প্রথম কারণ : শরীরে পানিশূণ্যতা
দ্বিতীয় কারণ : খাদ্যের ঘাটতি
তৃতীয় কারণ : দূর্বল ইমিউনিটি
সেই সাথে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয় আক্রান্ত হয়ে গেলে হয়ে পরে ইনসেফিলিটিস। এতে করে মৃত্যু হওয়ার কথা না কিন্তু সমাজে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে বিশেষ করে বাংলাদেশে ও ভারতে। এই জ্বরের কারণে মৃত্যু হওয়ার কথা না থাকলেও যেহেতু শিশুর মৃত্যু ঘটছে সেহেতু এনিয়ে প্রচুর গবেষণার পর কারণ হিসেবে নির্ণয় করা হয়
- Antibiotic
- Coked food
- Antipyretics Drug
Antibiotic : কনভেশনাল প্রোটোকলের আওতায় এই রোগের চিকিৎসার জন্য যে এন্টিবায়টিক দেয়া হয় তা শরীরে ডিহাইড্রেশন তৈরি করে, যেহেতু এমনিতে শিশুর শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে আছে সেহেতু ওষুধের কারণে নতুন করে ডিহাইড্রেট হওয়ার দরুন শিশু মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে।
Coked food: রান্না করা খাবার খাওয়ার মত শরীর উপযুক্ত থাকেনা দূর্বল ইমিউনিটির কারণে, যার দরুণ শিশু যে কোন খাবার খেলেই বমি করে দেয়, পেটে সমস্যা তৈরি করে, কোনমতে জোর করে খেতে পারলেও ডায়রিয়া হয়ে বেড়িয়ে যায়। শরীর যেহেতু রান্না করা কোন খাবার গ্রহণের মত উপযুক্ত থাকে না তাই শরীর আরও বেশি দূর্বল হয়ে পরে।
Antipyretics Drug : জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে আসলে শিশু আরও দূর্বল হয়ে পরে, যেখানে স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের কোন ক্ষমতা শরীরের থাকেনা সেখানে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যায়।
এই থেকে বাঁচার উপায় ?
১. ডিহাইড্রেশন থেকে বেড় করে আনতে হবে।
২. খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করা
৩. ইমিউন সিস্টেম ঠিক করা
এই তিনটি কাজের মধ্যে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তাহল, শরীরে ইমিউন সিস্টেম ঠিক করা। যা এই কাজটি করতে হবে জ্বর বেড়ে উঠার ৪ থেকে ৫ ঘন্টার মধ্যেই। ইমিউন সিস্টেম ঠিক করার সহজ কৌশল হলো ভিটামিন সি জাতীয় ফলের জুস পান করতে হবে নিয়ম করে ও আকুপ্রেসার করা। এটাকে বলা হয় FENTON reaction টকফলের জুস পান ও আকুপ্রেসার করলে ৪ থেকে ৫ ঘন্টার মধ্যেই ইমিউন সিস্টেম কার্যকর হয়ে ওঠে।
তারপর মিনারেল ব্যালেন্স করতে হবে। যেহেতু জ্বরের কারণে ডিহাইড্রেশন আছে সেহেতু প্রথমে মিনারেল ব্যালেন্স করার উপযুক্ত উপায় হচ্ছে ডাবের পানি পান করা। ডাবের পানি পান করলে সাথে সাথে মিনারেল ব্যলেন্স হয়ে যাবে। ডাবের পানি ঘাটতি পূরণ করে সাথে সাথে জ¦রের কারণে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে শরীরে সকল মিনারেল ব্যালেন্স হয়ে যাবে। এতো কোন ধরণের বমি হওয়ার সম্ভবনা থাকবে না।
নিয়ম হলো ঃ
প্রথম দিন: এক ঘন্টা পর পর ৪ বার শুধু টক ফলের জুস খাওয়াতে হবে, এতে লেবু, জামবুড়া, আনারস, কমলা, মাল্টার জুস দিতে হবে, এর মধ্যে লেবুই সবচেয়ে উত্তম। তারপর ডাবের পানি দিতে হবে একগ্লাস করে একঘন্টা পরপর ৪বার। এর মধ্যে জ্বরের প্রকোপ কমে আসবে, ১০০ এর ঘরে থাকবে। সেই দিন আর কোন খাওয়া যাবে না, এর বাহিরে শুধু কুসুম গরমপানি পান করা যেতে পারে এর বাহিরে কোন খাবার অথবা পানীয় পান করা যাবেনা।
সাথে, দশ মিনিট করে আকুপ্রেসার করা, আকুপ্রেসার খুবই কার্যকর তাই সঠিক উপায়ে আকুপ্রেসার করা হলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালি হয়ে উঠে। আকুপ্রেসার করার নিয়ম হলো শিশুদের ক্ষেত্রে, পায়ের তলায় আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করা, তেল হাতে নিয়ে পায়ের তলায় ম্যাসাজ করে গরম করে ফেলতে হবে। এতে আধাঘন্টায় শিশুর শরীরে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে, জ্বর কমে আসতে থাকবে। দুপায়ে পাঁচ মিনিট করে দশ মিনিট দিনে দুবার আকুপ্রেসার করতে হবে।
দ্বিতীয়দিন : এক ঘন্টা পর পর ২ বার শুধু টক ফলের জুস খাওয়াতে হবে, তারপর ২ঘন্টা পর পর দুই গ্লাস ডাবের পানি পান করতে হবে, তারপর ২০০ গ্রাম শসার জুস, ২০০ গ্রাম পরিমাণে টমেটোর জুস কোন কিছু না মিশিয়ে অধের্ক পানি অর্ধেক জুস মিশিয়ে পান করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর বাহিরে শুধু কুসুম গরমপানি পান করা যেতে পারে এর বাহিরে কোন খাবার অথবা পানীয় পান করা যাবেনা। ঠিক একই নিয়মে দুবার দুপায়ে ১০ মিনিট আকুপ্রেসার করতে হবে।
তৃতীয় দিন : এক ঘন্টা পর পর ২ বার শুধু টক ফলের জুস খাওয়াতে হবে, তারপর ২ঘন্টা পর পর দুই গ্লাস ডাবের পানি পান করতে হবে, তারপর ২০০ গ্রাম শসার জুস, ২০০ গ্রাম পরিমাণে টমেটোর জুস কোন কিছু না মিশিয়ে অধের্ক পানি অর্ধেক জুস মিশিয়ে পান করবে দুপুর পর্যন্ত। সন্ধ্যায় স্বাভাবিক সবজি ভর্তা, দিয়ে ভাত খাবে, কোন ভাবেই মাছ, মাংস খাবে না। ঠিক একই নিয়মে দুবার দুপায়ে ১০ মিনিট আকুপ্রেসার করতে হবে।
এতে করে শরীর ঠিক হয়ে যাবে, কোন ধরণের জ্বরের প্রকোপ থাকবে না, শরীরে শক্তি ফিরে আসবে এবং প্রাণঞ্চল হয়ে উঠবে, কোন ওষধের প্রয়োজন হবে না এই মরণঘাতি Acute Encephalitis Syndrome জ্বর ঠিক করতে তাও মাত্র তিনদিনের মধ্যেই। এই জ¦র সেরে উঠলে কয়েকদিন শরীরটাকে আরাম দেয়ার জন্য বেশি করে ফল সবজি খাওয়া জরুরী। এই নিয়মে চলতে থাকলে ডায়রিয়া হতে পারে তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, শরীর থেকে সকল ধরনের বর্জ্য বেড় হওয়া ও এই চিকিৎসার একটি প্রক্রিয়া।
এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত :
- Use of Vitamin C as antibiotic – Journal of Applied Nutrition 1953
- Mycobacterium tuberculosis is extraordinarily sensitive to killing by a vitamin C– induced Fenton reaction – Nat Commun. 2013
- Vitamin C in prophylaxis and therapy of infectious diseases. – Arch Pedriatr.1951 Jan;68(1):1-9. 1953
- The treatment of poliomyelitis and other virus diseases with vitamin C. – South med surh, 1949 Jul:111(7): 209-14.
- Massive doses of vitamin C and the virus diseases. – South med surh, 1951 Apr:113(4): 101-7.
- Ascorbic acid as a chemotherapeutic agent – Arch Pedriatr.1952 Apr;69(4):151-5
আলমগীর আলম, বিশেষজ্ঞ- আকুপ্রেসার ও ন্যাচারোপ্যাথি
২৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তৃতীয় তলা, ঢাকা।