দিনে দিনে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে নানা ওষুধের সংযোজন। এর সঙ্গে টোটকা চিকিৎসা। মূলত ডায়াবেটিস আসলে জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত রোগ। ফলে ওষুধের চেয়ে জীবনধারা পরিবর্তন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে দেখেছে, আমাদের জীবনধারা পরিবর্তন না করলে ডায়বেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। কারণ, শুধু ওষুধনির্ভরতায় অনেক রোগের আমন্ত্রণের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে থাকে। যার দরুন ডায়াবেটিসের সঙ্গে কয়েক বছর বসবাসে নতুন নতুন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। অথচ, ডায়াবেটিসের প্রকার আর ব্যাপ্তি দেখেও মানুষকে তার জীবনধারা পরিবর্তনে তেমন সাড়া ফেলা সম্ভব হয়নি।
এখন বেশ পুরোনো গবেষণাগুলো নতুন করে সামনে আসছে। এ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই নতুন করে বলা হচ্ছে যে মানুষ চা–পানকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে পারলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে। বিশেষ করে চায়ের মধ্যে কিছু ধরন রয়েছে, যা পানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বলা হয়, আমাদের ব্যস্ত দিনগুলোতে এক কাপ গরম চা ক্লান্তি দূর করে এবং এনার্জিতে ভরিয়ে তোলে। এক কাপ চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করতে পারে! হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কয়েকটি ভেষজ চায়ের সেবন ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়তা করে।
অ্যান্টি–অক্সিড্যান্টসমৃদ্ধ গ্রিন টি শরীরের প্রদাহ এবং কোষের ক্ষতি কমাতে পারে; পাশাপাশি ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও অত্যন্ত সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টিতে বায়ো–অ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে, এটি পেশি কোষে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে, যা শরীরে শর্করার মাত্রা কমাতেও সহায়তা করে। তা ছাড়া দিনে দুইবার গ্রিন টি পান ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও অত্যন্ত কার্যকর। আরও ভালো ফল পেতে এক চিমটি জায়ফলের গুঁড়া যোগ করে গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। এতে ঘুম ভালো হয় এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে।
গ্রিন টি কি বাজারেরটা খাবেন নাকি নিজে বানিয়ে খাবেন, সেটা একটি বিষয়। গ্রিন টি বাসায় তৈরি করতে চাইলে পুদিনাপাতা, তুলসীপাতা, থানকুনিপাতা, ধনেপাতার সঙ্গে চায়ের সবুজ পাতা ঘরের ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। তিন–চার দিনে এই তাজা পাতাগুলো শুকিয়ে রং বদলে যাবে, সেই শুকনা পাতাগুলো গরম পানিতে আন্দাজমতো দিয়ে কয়েক মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। তারপর সেটা সকাল–বিকেল পান করতে হবে। আর এই গ্রিন টিতে চিনি, মধু মেশানো যাবে না, স্বাদ বদলাতে লেবু বা আদা যোগ করা যেতে পারে।
ব্ল্যাক টি
ব্ল্যাক টি বলতে যে চা বলা হচ্ছে, তা হলো শুধু চায়ের পাতা শুকনা; গুঁড়া না, পানিতে জ্বাল দিলে যেটার পাতা খুলে যায়, একটু বেশি জ্বাল দিলে সবুজ রং এসে যায়। সেই চা হতে পারে আপনার আদর্শ। ব্ল্যাক টি প্রাকৃতিকভাবে ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কারণ, ব্ল্যাক টিতে থেফ্লাভিনস এবং থ্যারুবিগিনস নামক উদ্ভিজ্জ যৌগ বর্তমান, যা অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণসম্পন্ন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দু-তিন কাপ চিনি ছাড়া ব্ল্যাক টি সেবন ইনসুলিন নিঃসরণ উন্নত করতে পারে।
রোজেলা টি
একসময় আমাদের বাড়ির ঝোপঝাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাত রোজেলা, বাংলাদেশে যার নাম চুকাই, চুকুরি, ম্যাটস—এমন আঞ্চলিক অনেক নাম রয়েছে। রোজেলা টি সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত সহায়ক। রোজেলায় পলিফেনল ও অ্যান্টি–অক্সিড্যান্টসমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধক্ষমতা উন্নত করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রিত থাকে; এটা ফুসফুসের সমস্যায় দারুণ কার্যক। রক্তচাপজনিত সমস্যায় রোজেলা টি দিনে দুইবার খেলে উপকার পাওয়া যাবে। শরীর চনমনে হয়ে উঠবে এবং বুকে যত পুরোনো কফ রয়েছে, তা বের হয়ে যাবে। চুকাই বাজার থেকে কিনে তার গোটা ফেলে ঘরের ছায়ায় শুকাতে হবে তিন–চার দিন, তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে। তারপর চার থেকে পাঁচটি শুকনা চুকাই দিয়ে পানিতে জ্বাল দিলেই হালকা গোলাপি রং চলে আসবে, সেটা খেতে টক টক লাগবে, কোনো কিছু না মিশিয়ে খেতে হবে।
ঘরের তৈরি চায়ে হোক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।
হাল ফ্যাশন থেকে সরাসরি পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের চা