দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই আমরা যখন উৎসাহব্যঞ্জক কোনো কিছু শুনি তখন হাততালি দেই। এটা অতি সাধারণ ব্যাপার। আপনি জানলে অবাক হবেন প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট হাততালি দিলে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম আগের চেয়ে সক্রিয় ও সচল হয়ে উঠবে। নানারকম রোগব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে দেহ-মনে অনুভব করবেন প্রাণবন্ততা।
হাস্যকর শোনালেও আকুপ্রেশারের এ তত্ত্বটি দারুণ কাজের। হাততালি দিলে শরীরের রক্তচলাচলে বাধা দূর হয়ে যায়। সব বয়সি নারী-পুরুষের রক্তচলাচল স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এমনকি অনেক রোগ সারাতেও হাততালি কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন আধঘণ্টা করে হাততালি দিলে নানা উপকার পাওয়া যায়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা, অনিদ্রা, মাথাব্যথা, বাত ও কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত হাততালি দেওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এমন আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে হাততালির মধ্যে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে হাততালি। এছাড়া অ্যাজমার মতো নানা সমস্যায় হাততালি দিলে উপকার পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা যায়, হাততালি দেয়ার সময় কারো কারো ক্ষেত্রে এক হাতের সঙ্গে আরেক হাতের তালুর স্পর্শ হলেও সেখানে কোনো শব্দ হয় না। এ ধরনের হাততালির কোনো উপকারিতা নেই। আর তাই হাততালি দেওয়ার সময় এমন ভাবে দিন যাতে আশপাশের মানুষ বুঝে এখানে কিছু একটা হচ্ছে। বিষয়টাকে আবার অন্যভাবে বুঝলে ভুল করবেন। লিঙ্গ প্রতিবন্ধীদের একটি সংকেত হচ্ছে এভাবে তালি দেওয়া। এটা তাদের একটি যোগাযোগের মাধ্যমে। সেই দিকে না যাই। একা একা হাততালি দেওয়ার চেয়ে একসঙ্গে কয়েকজন মিলে হাততালি দিলে অবশ্য কেউ তেমন কিছু মনে করবে না।
চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপ্রেশারের সময় হাতের তালুর বিভিন্ন অংশে চাপ দেওয়া হয়। কখনো খালি হাতে আবার কখনো একটি বিশেষ ধরনের কাঠি ব্যবহার করে। এতে করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ হয়ে ওঠে। একইভাবে শুধুমাত্র হাততালির মাধ্যমেও হাতের বিভিন্ন পয়েন্টে চাপ পড়ে। এতে করে আপনি আকুপ্রেশারের মতো সমানভাবে উপকৃত হতে পারেন। আর তাই প্রতিদিন যেকোনো খুশির সংবাদে সবাই মিলে একসঙ্গে হাততালি দিতে পারেন। একা একা হাততালি দিতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে। তাই বলে কি নিজের সুস্থতার জন্য হাততালি দেবেন না?
* কোনো খুশির খবর, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীতে সবাই মিলে একসঙ্গে মিনিটখানেক হাততালি দিতে পারেন। সবাই মিলে একসঙ্গে হাততালি দিলে সেখানে এক ধরনের শব্দতরঙ্গ তৈরি হবে। পাশাপাশি আপনার শরীরের স্নায়ুগুলো আগের চেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠবে। আপনি অনুভব করবেন দুই হাতের ঘর্ষণের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। মনে ফুরফুরে অনুভূতি তৈরি হবে। স্ট্রেস থেকেও মুক্তি পাবেন।
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর ভালো ফলাফলের/কাজের অনুপ্রেরণায় হাততালি দেওয়া যেতে পারে।
* খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের উৎসাহ যোগাতে হাততালি দেওয়া যেতে পারে।
* কর্মস্থলে কোনো সহকর্মীর ভালো সংবাদে হাততালি দেওয়া যেতে পারে।
* দলগত কাজে সাফল্যের ক্ষেত্রে সবাই মিলে একসঙ্গে হাততালি দেওয়া যেতে পারে।
* বিভিন্ন ধরনের মিটিংয়ে উৎসাহব্যাঞ্জক কোনো প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে হাততালি দেওয়া যেতে পারে।
* বিশেষ করে শিশুদের উৎসাহ যোগাতে হাততালি একটি দারুন কার্যকর প্রক্রিয়া।
* প্রতিদিনের ব্যায়াম শেষে সবাই মিলে একসঙ্গে হাততালি দিয়ে বিদায় নিতে পারেন।
হাততালির উপকারিতার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই চলুন।
১। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের সাথে জড়িত রোগ অ্যাজমা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হাততালি দেয়া।
২। পিঠে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা ও জয়েন্টের ব্যথা কমতে সাহায্য করে হাততালি দেয়া।
৩। গেঁটে বাত থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে হাততালি দেয়া।
৪। নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের জন্য ও উপকারী হাততালি দেয়া।
৫। পরিপাকের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী থেরাপি হাততালি দেয়া।
৬। শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং একাডেমিক পারফর্মেন্সের উন্নতিতে সাহায্য করে হাততালি দেয়া। যে শিশুরা নিয়মিত হাততালি দেয় তাদের স্পেলিং মিস্টেক বা বানানের ভুল কম হয়। হাতের লেখার উন্নতিতেও সাহায্য করে হাততালি দেয়া।৭। শিশুদের মস্তিষ্ককে ধারালো হতে এবং কর্মঠ হতে সাহায্য করে হাততালি দেয়া।
৮। হাততালি দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বলে রোগ ব্যাধি দূরে থাকে।
৯। ডায়াবেটিস, আরথ্রাইটিস, হাইপারটেনশন, চোখের সমস্যা, ডিপ্রেশন, দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা, সাধারণ ঠান্ডা, ইনসমনিয়া এবং চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন যারা তাদের জন্য উপকারী প্রতিদিন আধা ঘণ্টা হাততালি দেয়া।
১০। যাদের বাসায় এয়ার কন্ডিশন আছে এবং অফিসেও এসি রুমে বসে কাজ করেন তাদের শরীরে কম ঘাম হয়। তারা ক্লেপিং থেরাপি প্র্যাকটিস করতে পারেন। এর ফলে শরীরের রক্ত চলাচল ভালো হবে এবং শরীরের ছিদ্রগুলো উন্মুক্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ক্ল্যাপিং থেরাপি
হাতের তালুতে নারিকেল তেল বা সরিষার তেল লাগিয়ে মালিশ করে নিন যাতে তেল শরীরে শোষিত হয়। এই থেরাপির ফলে শরীরে যে এনার্জি ওয়েভ তৈরি হবে তা যেন লিক হয়ে না যায় এজন্য মোজা ও চামড়ার তৈরি জুতা পড়ে নিন। দুই হাত প্রসারিত করে ডান হাত দিয়ে বাম হাতে আঘাত করুন। হাত সোজা রাখুন এবং কিছুটা ঢিলা রাখুন। দুই হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো যেন পরস্পর বারি খায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। ভালো দলাফল পেতে এই থেরাপি সকালে করার চেষ্টা করুন।
প্রতিদিন সকালে ২০-৩০ মিনিট হাততালি দিলে আপনাকে ফিট ও সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে। আমরা আগেই জেনেছি যে হাততালি দিলে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া উদ্দীপিত হয়। আর রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া ভালোভাবে হলে ধমনী ও শিরার বাঁধা এমন কি খারাপ কোলেস্টেরলও দূর হয়।
হাতের যে ৫ টি আকুপ্রেশার পয়েন্ট আলোড়িত হয় সেগুলো হল
হেন্ড ভ্যালি পয়েন্ট
বেজ অফ থাম্ব পয়েন্ট
রিষ্ট পয়েন্ট
ইনার গেট পয়েন্ট
থাম্ব নেইল পয়েন্ট
এই প্রেশার পয়েন্টগুলো উপরে উল্লেখিত স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলোর সাথে সম্পর্কিত যাদেরকে হাততালি দেয়ার মাধ্যমে কার্যকরী করা যায়।
Alamgir Alam
Expert of Acupressure, Naturopathy
29 Bangabandhu Avenue, 2nd Floor, Dhaka.