ম্যানি ও কিজি-কে নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের। ‘দিল বেচারা’ সিনেমাতে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নেওয়া দুই তরুণ অভিনেতা। এই ছবিতে ম্যানি অর্থাৎ সুশান্ত সিং রাজপুত এবং কিজি অর্থাৎ সঞ্জনা সাঙ্ঘি দুজনেই দু’ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। একজন অস্টিওসারকোমা এবং অপরজন থাইরয়েড ক্যান্সার। ছবির এই স্টোরিলাইন দর্শকের মনকে আবেগময় করে তুলেছিল। ছবিতে সঞ্জনা সাঙ্ঘি থাইরয়েড ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং তাকে সর্বদাই একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বহন করতে দেখা যায়। যার ফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এটা কেমন ধরনের অসুখ! তবে চলুন জেনে নিন থাইরয়েড ক্যান্সার রোগটি আসলে কী?
থাইরয়েড ক্যান্সার কী?
থাইরয়েড ক্যান্সার হয় থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে। এই থাইরয়েড গ্ল্যান্ড আমাদের স্বরগ্রন্থির নিচে থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। যখন থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ সাধারণ অবস্থার থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে এবং টিউমারের সৃষ্টি করে, তখন থাইরয়েড ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েড ক্যান্সারের প্রকার
প্যাপিলারি,
ফলিকুলার,
মেডালারি ও
অ্যানাপ্লাস্টিক-এই চার ধরনের থাইরয়েড ক্যান্সার হতে পারে।
থাইরয়েড ক্যান্সার হওয়ার প্রধান কারণ
থাইরয়েড ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত বের করা যায়নি। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে থাইরয়েড ক্যান্সার হয় বলে মনে করা হয়। এছাড়াও,
১) মাথা এবং ঘাড়ে অত্যধিক রেডিয়েশনের প্রভাবে এই ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
২) স্থূলতা।
৩) দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে থাকলে থাইরয়েড ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে।
৪) ক্রনিক হেপাটাইটিস-সি থেকে থাইরয়েড ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে৷
লক্ষণ
১) গলায় হঠাৎ কোনও মাংস পিণ্ড দেখা দেওয়া। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাংস পিণ্ড দৃশ্যমান হয় না।
২) খাবার গিলতে সমস্যা।
৩) শ্বাস নিতে অসুবিধে।
৪) গলার আওয়াজ কর্কশ হয়ে যাওয়া বা বসে যাওয়া।
৫) ঘাড়ের চারপাশে ও গলায় ব্যথা।
৬) খাবার প্রতি অনীহা এবং ওজন কমে যাওয়া।
৭) গরম হওয়া সহ্য করতে না পারা।
৮) হালকা কাশি।
৯) ঋতুচক্রে অনিয়ম।
ঝুঁকি
১) ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের পর এই রোগ বেশি দেখা দেয়। তবে বর্তমান দিনে অল্প বয়সিদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে।
২) পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
৩) বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা দিচ্ছে।
রোগ নির্ণয়
১) এই ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নিন৷
২) T4,TSH রক্ত পরীক্ষা এবং হাই রেজোলিউশন আল্ট্রাসাউন্ড টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে।
৩) বায়োপসি ও এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমেও নির্ণয় করা হয়।
৪) থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে ক্যান্সার রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করতে সরু সূচ দিয়ে গ্ল্যান্ড থেকে রস টেনে নিয়ে তার পরীক্ষা করা হয়, যাকে বলে ‘এফএনএসি’৷
চিকিৎসা
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও গবেষণা পদ্ধতির কারণে প্রায় ৯৪ শতাংশ রোগী খুব তাড়াতাড়িই সেরে ওঠেন। তাই ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।
১) ক্যান্সার থাক বা সন্দেহের পর্যায় থাক, দুই অবস্থাতেই ডাক্তাররা সার্জারি করে থাকেন। কতটা সার্জারি করবেন, কতগুলো গ্ল্যান্ড বাদ দেবেন তা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বিবেচনা করে সার্জারি করা হয়। সার্জারির পর বায়োপসিতে পাঠানো হয়। এরপরই জানা যাবে ক্যান্সারের বিস্তার এবং ক্যান্সারের স্টেজ সম্পর্কে।
২) রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
৩) বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন খাওয়ানোর মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়।
৪) থাইরক্সিন জাতীয় ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়।