থায়ামিন, যা ভিটামিন বি–ওয়ান নামেও পরিচিত, শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। বি ভিটামিন একটি কমপ্লেক্স, যা আটটি ভিটামিনের সমন্বয়। কমপ্লেক্স হওয়ার কারণে সব কটি ভিটামিন একসঙ্গে খাওয়া জরুরি। এটি শরীরকে শক্তি হিসেবে কার্বোহাইড্রেট হজমপ্রক্রিয়ায় কাজ করে, যা হজমশক্তিকে আরও সক্রিয় ও সক্ষম করে তোলে। কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও প্রোটিনকে শক্তিতে বা গ্লুকোজে রূপান্তর করতে সাহায্য করে; কিন্তু কোনো কারণে এই কমপ্লেক্সের কোনো একটির ঘাটতি হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে গ্লুকোজ বিপাক এবং স্নায়ু, পেশি আর হৃদ্যন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন বি–ওয়ান জরুরি; একে থায়ামিনও বলে। মানুষের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত বি ভিটামিন না থাকলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন বি–ওয়ান পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যায়। অবশ্য শরীর ভিটামিন ব্যবহার না করলে এটি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এটা সচরাচর ঘটে শরীরে ভিটামিন বি–ওয়ান প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হওয়ার ক্ষে্ত্রে।
প্রতিদিন ভিটামিন বি–ওয়ান গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বয়স ও লিঙ্গের ওপর নির্ভর করতে পারে। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাধারণত ১.২ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সাধারণত ১.১ মিলিগ্রাম প্রয়োজন হয়।
মানুষ প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি–ওয়ানের প্রায় অর্ধেক খাবার থেকে গ্রহণ করে যা প্রাকৃতিকভাবে থায়ামিন ধারণ করে, বাকিটা আসে এমন খাবার থেকে যা প্রস্তুতকারকেরা ভিটামিন দিয়ে শক্তিশালী করে। যদিও আমাদের দেশে এ ধরনের কাজ হয় না; যা উন্নত বিশ্বে সাদা ময়দা বা আটার সঙ্গে ভিটামিন বি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোজন করা হয়ে থাকে।
থায়ামিনের গুরুত্ব
থায়ামিনসমৃদ্ধ খাবার কেন খাবেন?
• প্রোটিন (গরুর মাংস)
• বাদাম, গম
• ডিম, সামুদ্রিক মাছ
• মটরশুটি, মুগ ডাল, ছোলার ডাল, মসুর ডাল
ভিটামিন বি–ওয়ান ধারণকারী ফল, শাকসবজি ও শস্য
• ফুলকপি, ব্রোকলি, আলু
• কমলা, কলা
• সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়োর বীজ
থায়ামিনের অভাব থাকলে যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে
• বর্ধিত হৃদ্যন্ত্র বা ট্যাকিকার্ডিয়া
• শ্বাসকষ্ট
• পেশি দুর্বলতা
• খিঁচুনি
• বমি
• অ্যানোরেক্সিয়া
• পা ও শরীর ফোলা
• ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া
• মাংসপেশির দুর্বলতা
• মনোযোগে ঘাটতি
• পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (হাত ও পায়ে ঝিনঝিনানি)
বি–ওয়ানের অভাবের ঝুঁকি কাদের?
• গর্ভাবস্থা
• দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা
• অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ
• মদ্যপান
• ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি
• দীর্ঘস্থায়ী মূত্রবর্ধক থেরাপি নেয় এমন ব্যক্তিরা
• দীর্ঘস্থায়ী, চিকিৎসা না করা থায়ামিনের ঘাটতির ফলে ওয়ার্নিকে-কর্সাকফ সিনড্রোম হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী মদ্যপান, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারে।
• বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন বি১ এর ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।
ভিটামিন বি–ওয়ান যে জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে
• মস্তিষ্ক সক্রিয়া রাখে
• পেশি সবল রাখে
• হার্টের পাম্প ব্যবস্থা ঠিক রাখে
• পেটের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে
• অন্ত্র তার চুল্লি সচল রাখে
• পেশি ও স্নায়ুকোষের ভিতরে এবং বাইরে ইলেক্ট্রোলাইট প্রবাহের সঙ্গেও জড়িত।
যাদের ভিটামিন বি–ওয়ান কমে যায়, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, মস্তিষ্কের বাইরে স্নায়ুর প্রদাহ হয়, তাঁদের চিকিৎসার জন্য থায়ামিনের বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রমাগত ডায়রিয়া এবং ক্ষুধা কম থাকা ব্যক্তিদেরও থায়ামিনের প্রয়োজন হতে পারে। কোমায় থাকা কারও থায়ামিন ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
বিশেষ ক্ষেত্রে থায়ামিন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: পেকেজলসডটকম