রোজায় শরীর পানিশূন্য হয়ে থাকে। এমনকি ইফতারের পর অতিরিক্ত পানি খেলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে কার্যকর হতে পারে এই পানীয়।
রোজা রাখার কারণে আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা হয়। এই ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন সতর্কতা অবলম্বন। কারণ, ইফতারের পর অনেকেই অতিরিক্ত পানি পান করেন। এ ক্ষেত্রে কিডনির জটিল সমস্যা হতে পারে। হতে পারে পেটের সমস্যাও। এ জন্য ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত কীভাবে পানি পান করে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়, সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন।

রোজায় পানিশূন্যতা দেখা দিলে যেসব শারীরিক ক্ষতি হতে পারে
• শরীরের সাধারণ কার্যক্ষমতা কমে যায়, ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়, মাথা ঘোরা বা ভারী লাগতে পারে।
• শ্লেষ্মা ঝিল্লি শুষ্ক হয়ে যায়, ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়, ঠোঁট ও জিব ফেটে যেতে পারে, চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
• রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়, রক্তচাপ কমে যেতে পারে, ফলে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে যেতে পারে।
• কিডনি ও মূত্রনালিতে সমস্যা হয়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং গাঢ় হলুদ বা বাদামি রঙের হয়ে যায়, কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, ইউরিন ইনফেকশনের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
• হজমজনিত সমস্যা হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, খাবার হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়, মনোযোগের ঘাটতি হতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে, স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
• তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, শরীর ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ফলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ করা জরুরি, নয়তো গুরুতর শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ জন্য ইফতারে এমন কিছু পান করতে হবে, যা আপনার শরীর দ্রুত পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করে আপনাকে সক্রিয় করে তুলবে।
এই পানীয়র উপকরণ খুবই সহজলভ্য। সহজেই বাসায় তৈরি করা যাবে।
উপকরণ
• খোসা ছাড়িয়ে কাটা শসা ১ কাপ
• টক দই ১ কাপ
• পানি ১ গ্লাস
• লবণ ১ চিমটি
• পুদিনাপাতা ৪টি
প্রণালি
প্রথমে পানি ও শসা ব্লেন্ড করুন, তারপর এতে টক দই ঢেলে আবার ব্লেন্ড করুন। এবার এক চিমটি লবণ (পিংক সল্ট হলে ভালো) মিশিয়ে নেড়ে নিয়ে গ্লাসে ঢেলে ৪টি পুদিনাপাতা দিয়ে ইফতারে প্রথম দিকে পান করুন।
দীর্ঘক্ষণ ডিহাইড্রেটেড থাকলে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়, যা শসার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। শসার মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্যানিন শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং পানিশূন্যতার ফলে হওয়া অভ্যন্তরীণ উত্তাপ কমায়। এই পানীয় রোজায় দিনে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ঘাম বেশি হলে প্রয়োজনীয় তরল ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শসায় থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস (যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড, লিগনান ও ট্রাইটারপেন) শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল হ্রাস করে কোষের পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন শরীরের পানিশূন্যতার ফলে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
দইয়ের প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট একসঙ্গে কাজ করে দ্রুত শক্তি দেয় এবং দীর্ঘস্থায়ী কর্মক্ষমতা বজায় রাখে। বিটা গ্যালাকটোসিডেজ এনজাইম ল্যাকটোজ ভেঙে গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ তৈরি করে, যা শক্তির উৎস। জার্নাল অব ডেইরি সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দইয়ে থাকা প্রোটিন ও ফ্যাট ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, ফলে দীর্ঘক্ষণ শক্তি বজায় থাকে।
এ জন্য ইফতারে এই স্মুদি হতে পারে শক্তি ও হাইড্রেট করার জন্য চমৎকার পানীয়; যা আপনাকে খুব অল্প সময়ে হাইড্রেট করে আপনাকে চাঙা করবে। এই স্মুদি ছোট–বড় সবাই পান করতে পারবেন, বিশেষ করে নিয়মিত ওষুধ সেবন করা ডায়াবেটিক রোগীরাও নিশ্চিন্তে এই পানীয় পান করতে পারবেন।
লেখক: খাদ্যপথ্য বিশেষজ্ঞ
প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: ইন্সটাগ্রাম ও পেকজেলস ডট কম