ইদানীং শহুরে মানুষের মধ্যে শুকনা ফল বা ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ডায়েট বিশেষজ্ঞদের অনেকে ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফল যে অবস্থাতেই খাওয়া হোক না কেন, তা পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ বেশ কিছু উপাদান ড্রাই ফ্রুটসে বেশি থাকে। তবে এই ড্রাই ফ্রুটসেরও ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাই ফ্রুটস খেলে স্বাস্থ্যের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হজমে ভালো, তবে হজমের সমস্যাও হতে পারে
ড্রাই ফ্রুটসে ফাইবার থাকে। যার জন্য বাদাম, আখরোট, কাজু, হ্যাজেলনাট, আলমন্ড ও পেস্তা হজমের সমস্যা কমায়। সেই সঙ্গে এসবে ভালো ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে। তবে এসব বাদাম পরিমাণে বেশি খেলে পেট ফুলে থাকা, গ্যাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক বাদামে ফাইটেট ও ট্যানিনের মতো যৌগ থাকে, যে কারণে সহজে হজম হয় না। আবার শুকনা ফলে ফাইবারের পরিমাণ বেশি বলে হজম করাটাও কখনো কখনো কঠিন। সে ক্ষেত্রে পেটে গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকে। বেশি বাদাম খেলে অনেকের ডায়রিয়াও হতে পারে।
ড্রাই ফ্রুটস ওজন বাড়াতেও পারে
ওজন কমাতে অনেকেই ড্রাই ফ্রুটস খান। এসব ফলের ফাইবার ও প্রোটিন ওজন কমানোয় দারুণ কার্যকর। কিন্তু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে উল্টো ওজন বাড়তে পারে।
হৃদ্স্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিসে ড্রাই ফ্রুটসের ভালো-মন্দ
সুষম খাবার হিসেবে ড্রাই ফ্রুটস হৃদ্যন্ত্র ও ডায়াবেটিসে উপকারী। কিন্তু কিশমিশ ও আলমন্ডে প্রচুর চিনি থাকে। সেই সঙ্গে এগুলো ক্যালোরিতে ভরপুর। এদিকে শুকনা ফলে পানির পরিমাণ খুব কম থাকে। ফলে চিনির ঘনত্ব এবং ক্যালোরির পরিমাণ যায় বেড়ে। কাজেই অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাই ফ্রুটস খেলে রক্তের সুগার ও হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যাতে পারে।
ফুড টক্সিসিটিও ফ্যাক্টর
পরিমাণগত বিষয়টি ঠিক না থাকলে বাদাম খাওয়ার ফলে ফুড টক্সিসিটি হতে পারে। বিশেষ করে ব্রাজিল নাটস বেশি খেলে শরীরে সেলেনিয়াম বেড়ে যেতে পারে। আলমন্ডে হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড থাকে, যার ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।
ড্রাই ফ্রুটসে হতে পারে অ্যালার্জি
অনেকেরই বাদামজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি থাকে। বাদাম খাওয়ার সময় গ্যাস, পেট ফোলাভাব কিংবা বমিভাব অনুভব করলে বুঝতে হবে আপনার বাদামজাতীয় ফলে অ্যালার্জি আছে। সে ক্ষেত্রে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ড্রাই ফ্রুটসের ভালো-মন্দ
ড্রাই ফ্রুটসের মধ্যে থাকে পটাসিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেশি নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। ড্রাই ফ্রুটস এবং বাদাম পটাসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিন্তু মাত্রায় বেশি ড্রাই ফ্রুটস খেলে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্যন্ত্র ও কিডনিতে খুব বেশি চাপের সৃষ্টি করে, যা হৃদ্রোগ বা কিডনি রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
কাজেই আলমন্ড, আখরোট, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, ব্রাজিল নাট, পেস্তা, হ্যাজেলনাট, কিশমিশ, ডুমুর ও খেজুরজাতীয় ড্রাই ফ্রুটস প্রতিদিন খেতে হবে। তবে পরিমাণের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। একজন মানুষ প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ গ্রামের মতো ড্রাই ফ্রুটস খেতে পারেন। ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় বিকেল বেলা।