Uncategorized

কুসুম গরম পানিতে শরীর-মন তাজা

শীতের সময় আমাদের শরীর রুক্ষ হয়ে ওঠে, যার দরুন পেটে সমস্যা, খিদে না লাগা থেকে শুরু করে ত্বকের অনেক সমস্যাই হয়ে থাকে। আপনি যদি শুধু নিয়মিত কুসুম গরম পানি পান করার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন, সেই সঙ্গে আরও কিছু উপকার পাবেন। অনেক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, কুসুম গরম পানি বিশেষভাবে হজমের উন্নতি করতে, পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। কুসুম গরম পানির বেশির ভাগ স্বাস্থ্যগত সুবিধাগুলো বৈজ্ঞানিক গবেষণা রয়েছে।

আসুন দেখে নিই কুসুম গরম পানি পান করাতে কী কী উপকার পেতে পারি।

হজমে সাহায্য করবে

কুসুম গরম পানি হজমপ্রক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের পাকস্থলী এবং অস্ত্রের মধ্য দিয়ে পানি চলাচল করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বর্জ্য দূর করে। গরম পানি পান করা পাচনতন্ত্র সক্রিয় করার জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। কুসুম গরম পানি আপনার খাওয়া খাবারগুলোকে দ্রবীভূত করতে পারে, যা আপনার শরীর সহজেই হজম করতে পারে। ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ পানি অস্ত্রের গতিবিধি এবং অস্ত্রোপচারের পরে গ্যাস নিষ্কাশনের ওপর অনুকূল প্রভাব, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে গরম বা ঠান্ডা পর্যাপ্ত পানি না পেলে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা প্রভাবিত করে, শরীর যখন ডিহাইড্রেশন হয়ে পড়ে তখন স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বিরূপ আচারণ করে যা মস্তিষ্কের নানা ত্রুটি হিসেবে আমরা দেখি। গবেষণায় দেখা গেছে, পানি শূন্যতার কারণে যে সমস্যাগুলো হয়েছিল, ঠিক সেই সমস্যাগুলো পানি পান করেই সমাধান করা গেছে।

বন্ধ নাক খুলে যাবে

আপনার যখন ঠান্ডাজনিত কারণে, সাইনাসের কারণে নাক বন্ধ থাকে তাহলে আপনি দুভাবে গরম পানির উপকার পেতে পারেন। প্রথমত, সারা দিন কুসুম গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন, প্রথম দিন থেকেই এর উপকার পাওয়া শুরু করবেন। দ্বিতীয়ত, গরম পানির বাষ্প নাকে নিশ্বাস নিলে সঙ্গে সঙ্গে নাক খুলে যাবে। এক কাপ গরম পানি মৃদু বাষ্পের গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া হলে বন্ধ সাইনাসগুলো তরল হয়ে বেরিয়ে যাবে, এমনকি সাইনাসের মাথাব্যথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। যেহেতু সাইনাস এবং গলাজুড়ে শ্লেষ্মা ঝিল্লি থাকে, তাই গরম পানি পান করলে সেই জায়গাটিকে গরম করে এবং শ্লেষ্মা জমার কারণে হওয়া গলা ব্যথাকে প্রশমিত করতে সহায়তা করতে পারে।

২০০৮ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, চা-এর মতো একটি গরম পানীয় নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, গলা ব্যথা এবং ক্লান্তি থেকে দ্রুত, দীর্ঘস্থায়ী উপশম প্রদান করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি সাধারণ কারণ। কুসুম গরম পানি পান করেই

কুসুম গরম পানিতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়নি এটা প্রতিরোধ করার একটি কার্যকর উপায়। হাইড্রেটেড থাকা মলকে নরম করতে সাহায্য করে এবং মলকে নিচে নামাতে সহজ করে। নিয়মিত কুসুম গরম পানি পান করা আপনার মলত্যাগকে নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।

গবেষণায় কিছু প্রমাণ রয়েছে যে ঠান্ডা (স্বাভাবিক তাপমাত্রা) পানি রিহাইড্রেশনের জন্য সর্বোত্তম, যে কোনো তাপমাত্রায় পানি পান আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের সুপারিশ হলো, মহিলাদের প্রতিদিন (২.৩ লিটার) পানি পান করতে হবে এবং পুরুষরা (৩.৩ লিটার) পান করবেন। ফলমূল, শাকসবজি এবং জুসের মতো খাবারে যে জলীয় অংশ আছে, তা এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত।

কুসুম গরম পানি দিয়ে দিন শুরু করার চেষ্টা করুন এবং রাতে শোয়ার আগে একগ্লাস কুসুম গরম পানি পান করে দিন শেষ করুন। আপনার শরীরের মৌলিকভাবে প্রতিটি প্রয়োজনীয় ফাংশন কার্যকর রাখতে পানির প্রয়োজন, তাই এই অমূল্য পানি পান করার জন্য প্রতিদিনের অভ্যাস গড়ুন। কুসুম গরম পানীয় পান করার সময় গবেষণায় বলা হয়েছে যে পানির তাপমাত্রা ১৩০ এবং ১৬০ ফারেনহাইট (৫০ এবং ৭০ সে) এর মধ্যে সর্বোত্তম তাপমাত্রা ধরা হয়ে থাকে, চায়ের মতো গরম নয়।

লেখক : আলমগীর আলম, খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ এবং প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Leave a Reply