জীবনযাপন, ন্যাচারোপ্যাথি, রোগ-ব্যাধি

নাইট্রোগ্লিসারিন একটি বিস্ফোরক ক্যামিকেল যা দিয়ে ডিনামাইট তৈরি হয় সেটি এখন হৃদরোগের বিখ্যাত ড্রাগ!

হার্টের রোগীদের একটি ড্রাগ নাইট্রোগ্লিসারিন ( এটি জেনেরিক নাম একটি পরিচিত বানিজ্যিক নাম নিডোকার্ড) আজীবন খেতে দেয়া হয়। এ নাইট্রোগ্লিসারিন তৈরি করেন ইটালিয়ান রসায়ন বিজ্ঞানী সবরেরো (Sobrero) ১৮৪৭ সালে। এটি মুলতঃ বিস্ফোরক ক্যামিকেল। আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট তৈরিতে বিস্ফোরক ক্যামিকেল নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করেন।

উইলিয়াম মুরেল নামক একজন চিকিৎসক ১৮৭৮ সালে সর্বপ্রথম এটিকে হার্ট পেইন কমানোর জন্য ব্যবহার শুরু করেন। এটির কার্যকরীতা ক্লিনিক্যালী প্রমানিত হওয়ার পর হার্ট চিকিৎসার অতি প্রয়োজনী ড্রাগ হিসাবে অনুমোদন লাভ করে। আলফ্রেড নোবেল মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তার হার্টেরচিকিৎসায় এটি ব্যবহার করেন।

নিডোকার্ড

নিডোকার্ড

এখন জানা যাক নাইট্রোগ্লিসারিন নামক এ বিস্ফোরক ক্যামিকেল হার্টের কিভাবে ব্যাথা কমায়। এটি স্বল্প মাত্রায় দেহ রক্তে মিশার পর রক্তনালীর সম্প্রসারণ ঘটে। ফলে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহ হয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। কারন অক্সিজেন ছাড়া দেহ কোষ বাঁচেনা। নাইট্রোগ্লিসারিন সরাসরি রক্তনালীর সম্প্রাসারন করেনা। এটি দেহ রক্তে মেশার পর একটি এনজাইম (এনহাইড্রেড ডিহাইড্রোজিনেজ যা কোষের মাইট্রোকনড্রিয়ায় তৈরি হয়) নাইট্রোগ্লিসারিন কে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিনত করে। এ নাইট্রিক অক্সাইডই রক্তনালীর সম্প্রাসারন ঘটায়। এ ড্রাগটি হৃদ রোগীদের সাথে রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়। এটি টেবলেট, জেল ও স্প্রে আকারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। ডাক্তার তার পছন্দের (যেখানে ইন্টারেস্ট আছে) কোম্পানীরটা লিখেন।

হার্টের সমস্যা

হার্টের সমস্যা

নাইট্রিক অক্সাইড একটি ন্যাচারাল ফ্রী রেডিকেল (মুক্ত আয়ন)। এটি প্রকৃতিতে বজ্রপাতের সময় তৈরি হয়। এবং স্বল্পস্থায়ী ফ্রী রেডিকেল প্রকৃতির নানা জৈব উপাদান তৈরিতে ব্যবহার হয়। প্রতিটি প্রানি ও উদ্ভিদ দেহে এটি প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়। নাইট্রিক অক্সাইড উদ্ভিদ ও প্রানি দেহের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বায়োলজিক্যাল অনু। ১৯৯২ সালে এটি কে মৌলিকুল অব দি ইয়ার ঘোষনা করা হয়। ১৯৯৮ সালে চিকিৎস বিজ্ঞানে নোবেল স্বীকৃত হয় হার্টের রক্তনালীর সম্প্রাসারনে এর ভুমিকা আবিষ্কারের জন্য।

মানুষের দেহের রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়াম (এক ধরনের কোষ যা দিয়ে রক্তনালীর ভিতরের আস্তরন তৈরি হয়।) এ নাইট্রিক অক্সাইড প্রতিনিয়ত উৎপাদন করে। এর ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তনালীর সম্প্রাসারন ও সংকোচন ঘটে। শারীরিক ব্যায়ামে দেহে নাইট্রিক অক্সাইড এর উৎপাদন বাড়ে। সাইট্রিক ফল (চুকা জাতীয় ফল) খেলেও দেহে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়ে। নাক দিয়ে শ্বাস নিলে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে নাইট্রিক অক্সাইড বৃদ্ধি পায়না।

সিলড্রেনাফিল

সিলড্রেনাফিল

সিলড্রেনাফিল (ভায়গ্রা) একটি যৌন উত্তেজক ড্রাগ। এটিও রক্তনালীর সম্প্রাসারন ঘটায়। ফলে পেনিসে প্রচুর রক্ত প্রবাহ বাড়ে এবং লিংগ স্ফীত হয় মুলত এ ড্রাগটিও রক্তে নাইট্রিক অক্সাইড এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

আমাদের ড্রাগ চিকিৎসায় ড্রাগ বিক্রি ঠিক রাখার জন্য ডাক্তাররা রোগীদের এ সিনথেটিক ক্যামিকেল ড্রাগ খেতে দেন যা কোন দিনই রোগীকে সুস্থ্য করবেনা।

ড. শিবেন্দ্র কর্মকার
পিএইচডি ইন ন্যাচারাল মেডিসিন

Leave a Reply