স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ প্রতিদিন সকালে হাঁটার চেষ্টা করেন। সকালে হাঁটার জন্য মানুষের শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে, হাড়ের নানা ব্যথা থেকে শুরু করে অস্থির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। ক্যালোরি ও মেদ কমাতে হাঁটতে হয়। হাঁটলে মন ভালো থাকে। কিন্তু মাটিতে বা ঘাসে হাঁটাহাঁটিতে উপকার হয় দ্বিগুণ। লিখেছেন আলমগীর আলম।
শরীরে গতি আনে
নিয়মিত প্রতিদিন খালি পায়ে হাঁটতে পারলে মানবদেহের চালিকার অন্যতম শক্তি ইলেকট্রনের বিস্তার ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। এই ইলেকট্রনগুলো পায়ের তলায় নির্দিষ্ট আকু পয়েন্ট এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের মানবদেহের অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলো ইলেকট্রন দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে, যা শরীরে জন্মানো ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। শরীরের অভ্যন্তরে নানা কারণে ইনফ্লামেশন তৈরি হয়, সেটিকে রোধ করতে আমাদের শরীরে ইলেকট্রনের উপস্থিতি খুবই জরুরি, যা বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পায়ের তলায় থাকে একাধিক সেন্সারি নার্ভের সুইচ পয়েন্ট, যা খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভেতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করে। খালি পায়ে হাঁটলেই পায়ের তলার সুইচগুলো অ্যাকটিভ হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, শরীরের ইউমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যার ফলে সহজেই রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
শরীরে নানা ব্যথা কমায়
আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাপ নিয়ে থাকি, সেটি হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব আমাদের শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যদিও আমাদের মাঝে এটি নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। কিন্তু গবেষণা বলে, খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, শরীরের ভেতরে ভারসাম্য ঠিক থাকে, নানা ধরনের ব্যথা নিয়ে যারা জীবনযাপন করছেন, তারা নিয়মিত খালি পায়ে মাটিতে হাঁটতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে অভ্যন্তরে আর্থিংয়ের দ্বারা ব্যথা কমানোর হরমোনগুলো সচল হয়ে ওঠে, ফলে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে, শরীরের ব্যথা কমে যায়। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, খালি পায়ে হাঁটলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পেশি ও হাড় মজবুত করতে খালি পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে। বয়সজনিত কারণে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, ভুল লাইফস্টাইলের কারণে মেমোরি লস হওয়াসহ নানা কারণে স্মৃতিশক্তির ঘাটতিজনিত সমস্যা থাকলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে থাকা নিউরনগুলো সকালে খালি পায়ে হাঁটার ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিউরনেগুলো সক্রিয় থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই বুদ্ধিও বাড়ে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে।
হার্ট ভালো রাখে
যারা নিয়মিত হাঁটতে সাহস করেন না, কিছু দূর হাঁটলেই হাপিয়ে যান, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয় তাদের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্যের কার্ডিও ভাসকুলার উন্নতি ঘটবে, এ সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায় অর্থাৎ বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছে যেতে শুরু করে হার্টে। সেই সঙ্গে হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে।
মানসিক শক্তি বাড়ে
আধুনিক জীবনযাপনে হতাশা একটি বড় দুর্যোগ, সেই থেকে বাঁচতে খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগ এবং হতাশা দূর হয়। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, ততই শরীরের নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। খাদ্য থেকে আমরা যেমন ফাইট্রোনিউট্রেন্ট নিয়ে থাকে। তেমনি মাটি থেকে ইলেক্ট্রন মানসিক শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করে মানসিক অবসাদ কমায়। সেই সঙ্গে ইনসোমোনিয়া প্রতিরোধ করে। যারা অনিদ্রায় ভুগে থাকেন, তারা নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে উপকার পাবেন।
এ ছাড়া খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে খালি পায়ে হাঁটার সঙ্গে চোখের সরাসরি যোগসূত্র আছে। ফলে পায়ের তলায় যত চাপ পড়ে, তাতেই দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। পেশি এবং হাড় আরও শক্ত হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে ১৫ মিনিট ধীরগতিতে হাঁটলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে, যদি হাঁটার মতো জায়গা না থাকলে ছোট জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেও এই উপকার পাবেন। অনেকের প্রথম দিনে খালি পায়ে হাঁটার কারণে সর্দি জ্বর হতে পারে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দুই-তিন দিন হাটলেই শরীর সহ্য করে নেবে।
লেখক: খাদ্য-পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
প্রধান নির্বাহী: প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র