রসুন কেবল মসলা নয়, ঔষধিও। ফলে রান্নায় ব্যবহার ছাড়াও রসুন নানাভাবে সেবন করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরিমাণ জানা না থাকলে ঘটতে পারে বিপত্তি। এ নিয়ে লিখেছেন খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ আলমগীর আলম।
রসুন কেবল একটি মসলা নয়, খাবারের স্বাদ বাড়াতেও সাহায্য করে। মানুষ তার খাদ্যকে পরিশোধিত করে নানা মসলার ব্যবহারে। আবার বহু মসলা খাবারে মিশিয়ে খাবারকে সুস্বাদু করেছে। কিছু মসলা মানুষ খাবারে মেশানো ছাড়াও এমনিতে স্বাস্থ্যকর পথ্য হিসেবে খেয়ে থাকে; এর মধ্যে রসুন একটা। খাবারে মেশানো ছাড়াও সরাসরি রসুন খাওয়ার মানুষ কিন্তু কম নয়। এটা মানুষ করে থাকে উপকার পেতে। কিন্তু এই রসুন খাওয়ার সঠিক পরিমাণ না জানা থাকলে উপকারী রসুনই হয়ে যেতে পারে নানা সমস্যার কারণ।
সুস্বাস্থ্যের জন্য রসুন: সর্দি-কাশির মতো রোগের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবেও পরিচিত রসুন। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে রসুনে অনেক পুষ্টিকর উপাদান আছে, যেমন অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যালিসিন, ফ্রুকটান, লাইলিল সালফাইড ও ভিটামিন এ, বি, সি, ডি। রসুনের থাকা অ্যালিসিন প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়ার সমস্যায় কার্যকর ভূমিকার পাশাপাশি প্রদাহ রোধ করে থাকে। রসুন কার্যকরভাবে পেটের আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস ও পেটব্যথায় উপকারী। এটি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ও পেটের ব্যথার উপশম ছাড়াও পেটের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। রসুন রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, রক্তনালির দেয়ালে লেগে থাকা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। রসুন হার্টকে সুরক্ষা দেয়, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া রসুন জয়েন্টের প্রদাহ কমায়।
রসুন কি পেটের জন্য ভালো?
রসুন একটি মসলা। এটি প্রাচ্য প্রাকৃতিক ঔষধি উপাদান, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তবে প্রচুর রসুন খাওয়া পেটের জন্য ক্ষতিকর নাকি পেটের ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রসুন খাওয়া উচিত, এই প্রশ্ন সব সময়ই অনেকেই করে থাকেন। রসুন খাওয়া পেটের জন্য ক্ষতিকর কি না, সেটাও একটি সাধারণ প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে, রসুন পেটের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। যদিও রসুন পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো। কারণ, এতে অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। তবু পেটের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যথা উপশমে রসুন খেতে পারেন। কিন্তু সেটা মাত্রা ছাড়ালে চলবে না। তাহলে হিতে বিপরীত হবে।
রসুনে রয়েছে ফ্রুকটান নামক একটি যৌগ, যা পাকস্থলী ও অন্ত্রের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। অত্যধিক রসুন খাওয়া সরাসরি পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপিত করবে, যা পেটের আস্তরণের ক্ষতি করতে পারে। সেখান থেকে বুকের জ্বালা, পেট ফাঁপা এমনকি পেপটিক আলসারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এমনকি অ্যালিসিনের মাত্রা বেশি হলে হেমোলাইসিস হতে পারে, যা রক্তাল্পতার দিকে যেতে পারে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রসুন সেবন করার সময় সতর্ক থাকা উচিত। অত্যধিক রসুন খাওয়া আপনার চোখ ও লিভারেরও ক্ষতি করতে পারে।
কাঁচা ও রান্না করে খাওয়ার নিয়ম: পরিপাকতন্ত্রের জন্য রসুন সঠিকভাবে ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে খেতে হবে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রাম রসুন খাওয়া ভালো। এ ছাড়া রসুন খাওয়াও ঠিকমতো করতে হবে। রসুন কাঁচা খাওয়া যায়। রান্নায় করে বা গাঁজিয়েও খাওয়া যায়। তবে রসুন খাওয়ার সঠিক উপায় হলো মিহি কুচি করে কিমার মতো করা। তারপর এটি খাওয়া বা প্রক্রিয়া করার আগে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বাতাসে রেখে দেওয়া। অ্যালাইন তাজা রসুনের প্রধান উপাদান। তাই কেবল কিমা করার পরে অ্যালাইনেজ এনজাইমের ক্রিয়াকলাপের অধীনে এই যৌগটিকে অ্যালাইসিন তৈরি করতে হাইড্রোলাইজ করে, যার কারণে খাওয়াটা নিরাপদ।
গাঁজিয়ে খাওয়া ভালো। কারণ, এতে ফ্রুক্টোজ, জৈব সালফার, পলিফেনল ও এস-অ্যালিল-এল-সিস্টাইন (এসএসি)-এর মতো পদার্থ রয়েছে। এসব উপাদান তাজা রসুনের তুলনায় গাঁজানো রসুনে চার থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পায়।
তাই রসুন খেতে হবে বুঝে ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে।
লেখক: প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র