পেটের সমস্যায় ভোগেন না, এমন মানুষের সংখ্যা কমই বোধ হয়। নারী–পুরুষনির্বিশেষে পেটের নানা পীড়ায় জর্জরিত। আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও যাপনই এর কারণ। তবে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে তুলসীর বীজ।
হজমজনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমাতে ও হার্টের সমস্যা দূর করতে একটি বীজই যথেষ্ট। আপনি হয়তো ভাবছেন, এমন কী বীজ আছে, যা উল্লিখিত সমস্যার সমাধান করতে পারে? আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন, এমন বীজ আপনার হাতের কাছেই আছে। শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কার্ব, ফ্যাট ও ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করবে এই বীজ। ইমিউনিটি বুস্ট করতে, চুল পড়া ঠেকাতে, ত্বক ঠিক রাখতে এই বীজ যেন একাই এক শ!
পুষ্টি উপাদান
তুলসীর বীজ বা বেসিল সিডে প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার আছে, অথচ ক্যালরি নেই। এর ভ্যালু শুনলে আপনিও আশ্চর্য হবেন। ১০০ গ্রাম বীজে ১৪ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম প্রোটিন, ১৩ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লিপিড, ৬৩ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২২ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ফাইবার থাকে। আর মিনারেল থাকে ২ দশমিক ২৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ২ দশমিক ২৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩ দশমিক ৫৫ মিলিগ্রাম ও জিংক ১ দশমিক ৫৮ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা
• এক টেবিল চামচ তুলসীর বীজে ৭ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। অনেকেরই নানা ধরনের পেটের সমস্যা আছে। কনস্টিপেশন, প্রতিদিন পেট পরিষ্কার না হওয়া, দিনে একাধিকবার টয়লেটে যাওয়া, খাওয়ার পরপরই টয়লেটে যাওয়া কিংবা যেকোনো সময়ে টয়লেটে যাওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যার কারণ আসলে পেটে প্রোবায়োটিক কম থাকা বা কমে যাওয়া। এসবই আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের লক্ষণ, যা দূর হতে পারে তুলসীর বীজে। কারও আবার এইচ পাইলেরি পজিটিভ থাকে, তাঁরাও এই বীজে থাকা প্যাকটিন নামে ফাইবারের কারণে উপকার পাবেন। এ বীজের মূল কাজ হলো পেটের প্রোবায়োটিকের মাত্রার ভারসাম্য তৈরি করা। প্রোবায়োটিক শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ করে, যার কারণে হাড় মজবুত থাকে।
• কনস্টিপেশন আমাদের লাইফস্টাইলের অংশ হয়ে গেছে। এখন শিশুদেরও এ সমস্যায় পড়তে দেখা যাচ্ছে। শিশুদের খাবারে ফাইবার ও পানির চরম ঘাটতি থেকেই এটা হচ্ছে। এ ঘাটতির কারণে আমাদের স্টুল শক্ত হয়ে যাচ্ছে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিচ্ছে পাইলস বা অ্যানাল ফিশার। এ সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি মিলতে পারে তুলসীর বীজ খেয়ে।
• যাঁদের ত্বকজনিত সমস্যা যেমন একজিমা, সোরিয়োসিস, স্কিন অ্যালার্জি আছে তাঁরাও মুক্তি পেতে পারেন। কারণ, তুলসীর বীজে ফেবিনয়েট থাকে, যা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বুস্টের কাজ করে। ফলে ত্বকের সমস্যায় তুলসীর বীজ গুঁড়া করে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে দারুণ উপকার পাবেন।
• পেকটিন ফাইবার আমাদের শরীরে অতিরিক্ত সুগার রাখতে দেয় না; ইমিউন সিস্টেমকে ঠিক করে মেটাবলিজম স্বাভাবিক করার সঙ্গে প্রাকৃতিক ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করে দেয়। এ কারণে ডায়াবেটিসেও খুব ভালো কাজ করে। ৩০ দিন নিয়মিত তুলসীর বীজ খেলে আপনার লিপিড প্রোফাইল ঠিক থাকবে, টিজি কমে আসবে, এইচডিএল বাড়বে, রক্ত পরিশোধন হয়ে যাবে।
• আধুনিক খাবারব্যবস্থায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণে আমরা তেমন কিছু খাই না। তাই তুলসীর বীজ আমাদের সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে, এমনকি আয়রনের ঘাটতিও পূরণ করবে।
• আমাদের হার্টরেট ঠিক রাখতে ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। এক টেবিল চামচ তুলসীর বীজে যে পরিমাণ আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, তাতে সেই প্রয়োজনও মিটবে। এতে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমবে। প্রতিদিন পুরুষের ১ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম ও নারীর ১ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন হলেও আমরা আমাদের খাবারে সেটা পাই না; তুলসীর বীজ সেই ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। ওমেগা–৩–এর ঘাটতি তো আমাদের বেসিক সমস্যা। এটা পূরণে নানা সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকি, অথচ তুলসীর বীজে এই ঘাটতিও পূরণ হওয়া সম্ভব।
• প্রাকৃতিক টক্সিন ক্লিনজার হিসেবেও তুলসীর বীজ কার্যকর, এমনকি ওজনও কমাবে।
এক চা–চামচ তুলসীর বীজ রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সেই পানিসহ তুলসীর বীজ পরদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এক মাস নিয়মিত খেতে হবে। এ ছাড়া দিনে খেতে চাইলে এক চা–চামচ বীজ এক কাপ পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে দুপুরের খাওয়ার আগে খেতে হবে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময়কেন্দ্র ।