ভেষজ চা চিত্তাকর্ষক পুষ্টিমান, স্বাস্থ্য-উন্নয়নকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা হয়। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ ধরনের চা সাধারণত প্রচলিত ওষুধের মতো কাজ করে। ডায়েটে প্রতিদিন ১ কাপ ভেষজ চা যোগ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গ্রহণ বাড়িয়ে তোলা যায়। এটি হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে, মস্তিষ্ককে সঠিক উপায়ে কাজ করতে সহায়তা করে, ইচ্ছাশক্তি, স্মরণশক্তি ও মনোবল বাড়িয়ে দিতে পারে। সঙ্গে মুক্তি দিতে পারে হজমের যেকোনো সমস্যা থেকে। ভেষজ চা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, বার্ধক্য রোধ ও শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। ভেষজ চা শুকনো ভেষজ, ফুল, ফল ও মসলা থেকে তৈরি করা হয়। এগুলো থেরাপিউটিক, স্বাস্থ্য-যত্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য খাওয়া হয়। এ ধরনের চা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ রান্নাঘরেই থাকে।
জনপ্রিয় ভেষজ চা
আদা চা
আদা এমন একটি ভেষজ, যার রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। যাদের খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব ও হজমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য আদা চা আদর্শ। হজমের সমস্যা দূর করতে শত শত বছর ধরে আদার রস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। আদায় আছে জিঞ্জেরল, যা প্রদাহরোধী এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি বমি ভাব, প্রদাহ, হজমের সমস্যা ও কোলোরেক্টাল ক্যানসার দূর করতে সাহায্য করে। ২ কাপ ফুটন্ত পানিতে ১ ইঞ্চি তাজা আদা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। স্বাদ ও কার্যকারিতা বাড়াতে এতে লেবুর রস ও ১ চিমটি লাল মরিচ যোগ করতে পারেন। তারপর খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর পান করুন।
ক্যামোমাইল চা
ক্যামোমাইলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ কমানোর ক্ষমতা, মৌসুমি অ্যালার্জির উপসর্গ ও পেশির খিঁচুনি কমানো এবং অনিদ্রার সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া অন্যতম। এটি পিএমএস উপসর্গ ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ক্যামোমাইলে অনেক বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
হলুদ চা
হলুদ চা হলুদের মূল ও গুঁড়া থেকে তৈরি করা হয়। প্রদাহ কমাতে এটি কার্যকরী। হলুদ চা অটো ইমিউন রোগের লক্ষণ কমাতে সক্ষম। নিয়মিত এই চা পানে জয়েন্টের ব্যথা উপশম হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১ চা-চামচ হলুদগুঁড়া ২ থেকে ৪ কাপ পানিতে ১০ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। এরপর পানি ছেঁকে পান করুন। স্বাদের জন্য এতে আদা যোগ করতে পারেন।
অশ্বগন্ধা চা
আমাদের এই অঞ্চলে অশ্বগন্ধা চা পান করা একটি সাধারণ অভ্যাস। এটি বহু প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অশ্বগন্ধা অ্যাডাপ্টোজেন হিসেবে কাজ করে, যা শরীরকে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। অশ্বগন্ধা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর চায়ের মধ্যে একটি। এটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মোকাবিলা করার ক্ষমতা তৈরিসহ অনেক জৈবিক পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এটি কর্টিসলের মাত্রা কমাতে, অ্যাড্রিনাল ক্লান্তির লক্ষণ কাটিয়ে উঠতে, মেজাজ স্থিতিশীল করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা টি-ব্যাগ সহজেই পাওয়া যায়। এর সহজ চা রেসিপিও আছে। ১ কাপ সেদ্ধ পানিতে ১ চা-চামচ শুকনো অশ্বগন্ধার শেকড় ১০ মিনিট জ্বাল দিন, এরপর সকালে ও রাতে পান করুন।
সতর্কতা
কিছু ভেষজ চা নির্দিষ্ট ওষুধের সঙ্গে মেশানো ঠিক নয়। কিছু ভেষজ আবার গর্ভবতীদের সেবন করা উচিত নয়। এ ছাড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে প্রচুর পরিমাণে ও ঘন ঘন খাওয়াও ঠিক নয়। ভালো হয়, এগুলো নিয়মিত খাওয়া শুরুর আগে খাদ্যপথ্য বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নেওয়া।
লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র