কাউফল একধরনের অপ্রচলিত টক স্বাদের ফল। আমাদের গ্রামবাংলায় এটা বিভিন্ন নামে ডাকে। যেমন: কাউয়া, কাগলিচু, তাহগালা, ক্যাফল, কাউগোলা, পাঁচদানা ইত্যাদি। এর গাছ মাঝারি আকৃতির, এর পাতা ও ডালপালা কম, ওপরের দিকে ঝোপালো হয়ে ওঠে। সাধারণত বাড়ির জঙ্গলে এই গাছ দেখা যায়। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে কমলা বা হলুদ হয়। ফলের ভেতর চার-পাঁচটি দানা থাকে, যার কারণে অনেকেই এটাকে পাঁচদানা ফলও বলে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশে কাউগাছ দেখা যায়। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও এই ফল বেশি ক্ষেত্রে জ্যাম তৈরি করা হয়।
কাউফলের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রামে আছে ৬৩ ক্যালরি, যার কারণে চর্বিসম্পৃক্ত বা ভালো কোলেস্টেরল রয়েছে। উচ্চমাত্রায় ফাইবারে সমৃদ্ধ, কাউফলে ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস এবং প্রতি ১০০ গ্রামে আরডিএ প্রায় ১২%। ভিটামিন সি থাকার সঙ্গে একটি শক্তিশালী জলে দ্রবণীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল মানবদেহের ভাইরাল ফ্লু প্রতিরোধ করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রির্যাডিক্যাল সাফ করতে সাহায্য করে। এর শক্তি ৬৩%, ক্যালসিয়াম ৫.৪৯ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৫.৫ গ্রাম, কপার ০.০৬৯ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ০.৫০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.১৭ মিলিগ্রাম, মোট ফ্যাট ০.৪ গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৩.৯ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল ৩.৫% , ম্যাঙ্গানিজ ০.১০ মিলিগ্রাম, ফাইবার ৫.১০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৯.১২ মিলিগ্রাম, জিংক ০.১২ মিলিগ্রাম।
কাউফলের উপকারিতা
মাড়ির সংক্রমণ রোধে: যাঁদের মাড়িতে গুরুতর সংক্রমণ রয়েছে, তাঁদের জন্য কাউফল হতে পারে একটি ভালো পথ্য, মৌসুমি ফলটি নিয়মিত খেলে মাড়ির সংক্রমণ ভালো হয়ে যায়, মাড়ি মজবুত করে।
মুখের অরুচিভাব দূর করতে: হঠাৎ করে অরুচি হলে কাউফল খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে। কাউফল অনেকটা চুষে খাওয়া হয়, তাই এটা চুষে খেলে জিবের ওপরে ভাইরাল প্রলেপ দূর হয়ে যায়, যার কারণে রুচি ফিরে আসে।
অপুষ্টির সমস্যায়: অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিলে কাউফল খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে শিশুদের অপুষ্টিজনিত কারণে কাউফল খাওয়া যেতে পারে। এর পুষ্টিগুণের কারণে সহজেই শরীরে একটি ব্যালান্স তৈরি করতে সাহায্য করে।
ঠান্ডার সমস্যায়: ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিলে সকাল-বিকেল কাউফল খেলে উপকার পাওয়া যায়। ভিটামিন সি ঠান্ডাজনিত সমস্যার জন্য বিশেষ উপকারী, তাই ঠান্ডা লাগলে কাউফল কফ বের করতে সাহায্য করে।
আমাশয় নিরাময়ে: পেটের সমস্যা বা আমাশয় হলে কাউফল খেলে দ্রুত নিরাময় হয়ে যায়। এতে থাকা জিংক হজমে ভারসাম্য আনে, সেই সঙ্গে অধিক ফাইবারের কারণে পুরোনো মল পরিষ্কার করে।
মাথাধরা নিরাময়ে: অনেকের বিভিন্ন কারণে মাথা ধরে থাকে। মাথাধরা নিরাময়ের জন্য কাউফল খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
রোগপ্রতিরোধে: কাউফল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ভালো উৎস, যা রোগপ্রতিরোধে কাজ করতে পারে এবং বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
খিঁচুনি নিরাময়ে: কাউছাল ও ফল সেদ্ধ করে এই ক্বাথ সকাল-বিকেল সেবন করলে খিঁচুনি রোগ ভালো হয়। এটি একটি প্রাচীন চিকিৎসা, যার কারণে একসময় গ্রামে কাউগাছ রাখার প্রবণতা ছিল।
এ ছাড়া কাউফলে কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেশিয়াম খুব ভালো পরিমাণ রয়েছে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একইভাবে এটা স্ট্রোক এবং করোনারি হার্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ