পত্রিকায় প্রকাশিত, ফল, স্বাস্থ্য টিপস্‌

লটকন শক্তিতে কাঁঠালের দ্বিগুণ

অনেকটা আঙুরের মতো দেখতে লটকন একটি সুস্বাদু ফল। এটি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে বেশি হয়। আমাদের দেশেও এই ফলের ব্যাপক চাষ হয়। প্রাচীনকালে এগুলো ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। খাদ্যশক্তির ভালো উৎস লটকন। দেহ সক্রিয় রাখতে ও দৈনন্দিন কাজ করতে খাদ্যশক্তি প্রয়োজন হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে ৯২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়, যা আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

এই ফলে নানা রকম খনিজ উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম উল্লেখযোগ্য। এসব উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখে।
প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে ৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্রোমিয়াম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে ৫.৩৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। লটকনে ভিটামিন ‘বি’ পাওয়া যায়। প্রতি ১০ গ্রাম লটকনে ১০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘বি’ ওয়ান ও প্রতি ১০০ গ্রামে ০.২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ পাওয়া যায়।

  • ক্যানসার প্রতিরোধে: লটকন ক্যানসার প্রতিরোধে ব্যবহৃত একটি ফলও হতে পারে। এই রোগটি এমন একটি রোগ, যা তাড়াতাড়ি এড়ানো উচিত। তার জন্য ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে আপনি এই ফল খেতে পারেন।
  • অ্যানিমিয়া রোধে: আয়রনের স্বল্পতার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা তৈরি হয় শরীরে। লটকনে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এ কারণে এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • ডিহাইড্রেশন কমায়: ডিহাইড্রেশন কাটিয়ে উঠতে লটকন ফলের প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। পানি ছাড়াও আপনি তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এই ফল খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
  • লাল চোখ নিরাময় করে: লাল চোখ আসলে অনেক কারণের দ্বারা সৃষ্ট চোখের ব্যাধিগুলোর একটি ইঙ্গিত, চুলকানি থেকে শুরু করে। চোখ লাল কমানোর জন্য লটকন খুব কার্যকর।
  • পরিপাকতন্ত্রে সাহায্য করে: লটকনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপাদান পরিপাকতন্ত্রের সঠিক কাজ করতে সাহায্য করে। এটি যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবারযুক্ত একটি ফল। এই ফল অন্ত্র ও পাকস্থলীর মতো পরিপাক অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করবে। একটি সুস্থ পরিপাক অঙ্গ আপনার পরিপাকতন্ত্রকেও সুস্থ করে তুলবে।

  • রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখুন: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে লটকন ফল বেশ উপকারী। ফলটিতে অতিরিক্ত চিনির উপাদান নেই, তাই এটি আপনার শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াবে না।
  • কিছু চর্মরোগ নিরাময়: বাহ্যিক রোগের জন্য, লটকনকে খুব শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। ফলটি বিভিন্ন চর্মরোগ যেমন চুলকানি, পানু, খোসপাঁচড়া ও দাদ সারাতে সক্ষম। কৌশলটি খুবই সহজ, শুধু এই ফলটি বেটে অসুস্থদের ত্বকে লেপে দিতে হয়।
  • শরীরের জন্য শক্তির উৎস: শরীরে শক্তি বাড়াতে লটকন একটি ফল। ফলটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিন থাকে, যা খাওয়া হলে শক্তিতে পরিণত হয়। আপনি যদি এটি আপনার নিয়মিত ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করেন তবে আপনি সারা দিন সক্রিয় থাকবেন।
  • স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়: লটকনে কলার মতোই পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকে, যা স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এটি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমায়।
  • হাড় সুরক্ষায়: লটকন ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। এ কারণে লটকন হাড় সুরক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। সঙ্গে থাকে আয়রন, যা রক্ত ও হাড়ের জন্য বিশেষ উপকারী।
  • ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ করে: লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। দিনে দুই-তিনটি লটকন খেলে শরীরের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হয়। ভিটামিন ‘সি’ ত্বক, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে। লটকনে ভিটামিন ‘সি’ বেশি থাকায় দিনে দুই-তিনটি লটকন ভিটামিন ‘সি’র সার্বিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।

লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম, যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় কাজে লাগে। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নানা রকম পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রুচি বাড়াতে লটকন বেশ উপকারী।

লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ

ছবি: সেলিনা শিল্পী

Leave a Reply