আদিকাল থেকে আমরা হলুদের নানা ধরনের ব্যবহার দেখে আসছি—রূপচর্চা, রান্না, ব্যথা নিবারণ ইত্যাদিতে। তবে ঔষধিগুণের কারণে ওষুধ হিসেবেও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদে আছে কিছু বিশেষ উপাদান, যা শরীরের অনেক সমস্যার কার্যকরী সমাধান। হলুদে অ্যান্টি–ইনফ্লামেশন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও কার্কুমিন উপাদান আছে, যা আমাদের শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন এমন রোগের ক্ষেত্রে।
এগুলো আমরা নানাভাবে আমাদের প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব, তা জানিয়ে দেওয়া হলো:
ক্যানসার প্রতিরোধে
নিয়মিত হলুদের গুঁড়া খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়; বিশেষ করে ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়া রোধে হলুদ সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি মুখগহ্বরের ক্যানসার রোধে খুবই কার্যকরী।
শ্বাসজনিত সমস্যা
যাঁদের অ্যাজমা ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য হলুদের গুঁড়া অত্যন্ত উপকারী; নিয়মিত হলুদগুঁড়া গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে খেলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
লিভারের ইনফেকশন
লিভারের ইনফেকশন আছে, জন্ডিস হয়ে থাকলে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ গরম পানির সঙ্গে এক চা–চামচ হলুদগুঁড়া মিশিয়ে খেলে লিভারের ইনফেকশন কমে যায়, এই চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদে করতে হয়। আবার সকালে খালি পেটে দুই চা–চামচ কাঁচা হলুদের রস খেলে লিভারে বাইলের উৎপাদন বেড়ে যায়। এই বাইলই শরীর থেকে বিষ, বর্জ্য নির্মূল করতে ভূমিকা পালন করে। এই বাইল দেহ থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বের করে দেয় এবং পাকস্থলী থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
টক্সিন মুক্ত করতে
যদি শরীর অসুস্থ হয়ে যায় অথবা নানা রকম রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দেহকে সম্পূর্ণ টক্সিনমুক্ত করলে সব রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে হলুদগুঁড়া এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে।
শিশুদের লিউকেমিয়া সারায়
শিশুদের লিউকেমিয়া এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, বিশেষত অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মিত খাওয়ার ফলে শিশু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অ্যান্টিবায়োটিকে আর কাজ হচ্ছে না। এমন শিশুদের জন্য কাঁচা হলুদের রস এক চা–চামচ কুসুম গরম পানি ও মধু মিশিয়ে খেতে হবে, দীর্ঘ মেয়াদে কাঁচা হলুদ খেলে লিউকেমিয়া সেরে যায়।
আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোধে সাহায্য করে
ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন বা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ দূর করে
কম সময়ের প্রদাহ শরীরের জন্য উপকারী এবং এটি রোগের সঙ্গে লড়াই করে। তবে দীর্ঘ সময়ের প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন জীবননাশের কারণও হয়। হলুদ এই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। সকালে কাঁচা হলুদের রস এক চা–চামচ কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন এবং রাতে হলুদের গুঁড়া গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন দূর হয়ে যায়।
মস্তিষ্ককে কার্যক্ষম রাখে
BDNF (Brain-derived neurotrophic factor) হরমোন অথবা ব্রেন-ডিরাইভড নিউরোট্রোপি মস্তিষ্কে নিউরনের ভাগ এবং সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করে, যা মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমায়। বয়স বাড়লে মস্তিষ্কের এই কার্যকারিতা কমে যায়। যদি খাদ্যতালিকায় হলুদ থাকে, এই হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে, স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। সকালে কাঁচা হলুদের রস এক চা–চামচ কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন এবং রাতে হলুদের গুঁড়া গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়
রক্তনালির অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়, এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। খাদ্যতালিকায় হলুদ থাকলে রক্তনালির কার্যক্রম ভালো থাকে। এর ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। সকালে কাঁচা হলুদের রস এক চা–চামচ কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে এবং রাতে হলুদের গুঁড়া গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
হলুদের গুণ পেতে হলে অবশ্যই গুঁড়ার ক্ষেত্রে প্যাকেটজাত হলুদ না নিয়ে খোলা হলুদ কিনে নিজেই পিষে নিন, তাতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কাঁচা হলুদের ক্ষেত্রে ফ্রিজে না রেখে পেস্ট করতে পারলে ভালো। আর যদি অর্গানিক হলুদ পাওয়া যায়, সেটায় ভালো ফল পাওয়া যাবে। হলুদ ঔষধিগুণে ভরা; এর নির্দিষ্ট ডোজ আছে তাই অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা তৈরি হয়। এ জন্য অতিরিক্ত না খেয়ে বর্ণিত ডোজে খাওয়া উত্তম।
অনেকে হলুদ গায়ে মাখেন, এটা আয়ুবের্দিক মতে বহুগুণের, বিশেষ করে শরীরে কোনো ধরনের শুষ্ক চর্মরোগ থেকে থাকে তার জন্য ভালো। সপ্তাহে দুই দিন গায়ে মাখলেই যথেষ্ট।
লেখক: খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ