একসঙ্গে অনেকটা গ্রহণ না করে রোজকার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিনই গ্রহণ করতে হবে ভিটামিন সি। কারণ এই ভিটামিন আমাদের শরীরে জমা থাকে না।
ভিটামিন সি একটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যা প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবারে থাকে, বিশেষ ক্ষেত্রে সম্পূরক হিসাবে খেতে হয়। এটি এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত। দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী এটি আপনার প্রতিদিনই গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভিটামিন সি কোলাজেন, এলকার্নিটাইন এবং নির্দিষ্ট নিউরোট্রান্সমিটারের জৈব সংশ্লেষণে সহায়ক। এই ভিটামিন প্রোটিন বিপাকের কাজের সঙ্গেও জড়িত। কোলাজেন সংযোজক টিস্যুর একটি অপরিহার্য উপাদান, যা ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদিকে ভিটামিন সি একটি কার্যকর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি শরীরে অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পুনরুৎপাদন করতে পারে। ভিটামিন সি, তার এই অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভূমিকার মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। আর এভাবে এটি কিছু ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ আর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার বিকাশ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আয়রনের শোষণ বাড়ায়। যদি শরীরে দিনের পর দিন ভিটামিন সি কম থাকে, তবে স্কার্ভি রোগ হয়, যাতে ক্লান্তি বা অলসতা, শরীরের বিভিন্ন অংশের সংযোগকারী টিস্যুর দুর্বলতা দেখা দেয়।
অন্ত্রে ভিটামিন সি কতটুকু শোষিত হবে তা একটি নির্দিষ্ট ডোজনির্ভর। অক্সিডাইজড ভিটামিন সি, বা ডিহাইড্রোয়াসকরবিক অ্যাসিড, কিছু গ্লুকোজ পরিবহনকারীর মাধ্যমে কোষে প্রবেশ করে এবং তারপরে অভ্যন্তরীণভাবে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডে পরিণত হয়।
কতটুকু ভিটামিন সি গ্রহণ করবেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি এর ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিন এ ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ডের ডায়েটারি রেফারেন্স ইনটেকস এ ভিটামিন সি আর অন্যান্য পুষ্টির গ্রহণের মান দেয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদা ৯০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম। সারাদিনে দুটো আমলকি খেলেই তা পূরণ হয়ে যায়। আমাদের দেশে ঋতু অনুযায়ী সবসময় কিছু টক ফল ও সবজি পাওয়া যায় যাতে ভিটামিন সি থাকেই। ফল এবং শাকসবজি হল ভিটামিন সি এর সর্বোত্তম উৎস। বিশেষ করে আমলকী। এমনিতে আমরা মনে করি কমলায় ভিটামিন সি বেশি। কিন্তু আমলকিতে কমলার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। পেয়ারাও ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস। পেয়ারার খোসায় কমলায় চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি এর অন্যান্য ভালো উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল ও সবুজ মরিচ, ব্রকলি ইত্যাদি।
খাবারের ভিটামিন সি দীর্ঘদিনের স্টোর করে রাখা ও রান্নার মাধ্যমে কমে যায়, কারণ অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পানি দ্রবণীয় আর তাপে নষ্ট হয়। স্টিম করলে বা মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে ভিটামিন সি কম নষ্ট হয়। সৌভাগ্যবশত, ভিটামিন সি-এর অনেক ভালো খাদ্য উৎস যেমন ফলমূল এবং শাকসবজি সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়। দিনে পাঁচটি বৈচিত্র্যময় ফল এবং শাকসবজি খেলে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যেতে পারে। একটি গোটা পাতিলেবুতে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। তবে মনে রাখবেন, লেবুর আকার ও প্রজাতির উপর ভিত্তি করে এই পরিমাণ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
খাবারের ভিটামিন সি
আমলকি ২ টা ১৯৬
কাঁচা মরিচ, ২ ৩ টা ১০৬
কমলার রস, আধা কাপ ১০৩
কমলা, ১ মাঝারি ৭৮
আঙুরের রস ৭৮
লেবু গোটা ৬০
ব্রকলি রান্না করা, আধা কাপ ৫৭
জাম্বুরা, দুই ফালি ৪৩
টমেটো দুইটা ৩৭
বাঁধাকপি, রান্না করা, ৩১
পালং শাক, রান্না করা ১০
ভিটামিন সি এর অভাবে কী হয়
দিনের পর দিন শরীরে ভিটামিন সি এর প্রচন্ড ঘাটতি হলে স্কার্ভি সর্দিকাশি হতে পারে। আরো কিছু লক্ষণের মধ্যে আছে ক্লান্তি, অস্বস্তি আর মাড়ির প্রদাহ। ভিটামিন সি এর ঘাটতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোলাজেন সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। ফলে সংযোজক টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পেটিচিয়া, ইকাইমোসেস, জয়েন্টে ব্যথা, দেরিতে ক্ষত নিরাময়, হাইপারকেরাটোসিস থেকে ক্রমবর্ধমান রক্তপাত ও আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা ঘটতে পারে। শিশুদের মধ্যে হাড়ের রোগও হতে পারে এই ভিটামিনের অভাবে
ভিটামিন সি বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়?
আমরা সাধারণত খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন সি গ্রহণ করি। খাবার থেকে গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীর স্বয়ং বের করে দেয়। অর্থাৎ, খাবার থেকে ভিটামিন সি গ্রহণের মাধ্যমে এর শরীরে জমে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আর সাপ্লিমেন্টের বেলায়ও তা সত্য। তবে, ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত ভিটামিন সি একবারে গ্রহণ করলে পেট ফাঁপা, বমিভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কিছু লোকের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত ভিটামিন সি চামড়ায় লালচে দাগ বা খসখসে ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
শরীরের প্রয়োজনে ভিটামিন সি অনিয়মিতভাবে একবারে অনেকটা গ্রহণ না করে প্রতিদিন গ্রহণ করবেন। কোন কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়। তাই সেই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। শুধু সাপ্লিমেন্টের ওপরে নির্ভর না করে প্রাকৃতিক উপায়ে খাবারের মাধ্যমেই গ্রহণ করা উচিত ভিটামিন সি।
লেখক: পথ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলস ডট কম