ডেউয়া কাঁঠালের মতোই গুচ্ছফল। মার্চে ডেউয়ার প্রায় পাতাহীন ডালপালায় ফুল আসে আর আগস্টে ফল পাকে। এ ফলের বাইরের অংশটি থাকে অসমান, এবড়োখেবড়ো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়। গাছ লম্বা উঁচু হয়। কাঁচা টক টক স্বাদ, কিন্তু পাকলে সেটা তখন অন্য স্বাদ—সেটা টকও নয়, আবার মিষ্টিও নয়। ডেউয়ার আদি জন্মস্থান বঙ্গবর্ম এলাকা। বর্মায় এ ফলের নাম মাইয়াক লুয়াং। অঞ্চলভেদে এই ফল মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের আধার বলা হয় ডেউয়াকে। এ ছাড়া ডেউয়ায় আছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডেউয়ায় খাদ্যযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে রয়েছে খনিজ ০.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ১৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৩৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম।
দেখতে অদ্ভুত ও খেতে টক-মিষ্টি ডেউয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি এর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণও।
• মেদ ও ভুঁড়ি কমাতে: মেদ ও ভুঁড়ি কমাতে চাইলে ডেউয়ার রস এক থেকে দেড় চামচ ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে রোজ একবার করে এক মাস খেলে উপকার পাবেন। তবে ১২ মাস তো এ ফল পাওয়া যায় না। এ জন্য যখন পাওয়া যাবে, তখন কেটে রোদে শুকিয়ে রাখতে পারেন।
• পেট ফাঁপা সমস্যায়: পেটে বায়ু জমলে পাকা ডেউয়ার রস দেড় চামচ আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে অল্প চিনি দিয়ে প্রতিদিন একবার এক সপ্তাহ খেলে উপকার হবে।
• মুখের রুচি ফেরাতে: যাঁদের অসুস্থতার কারণে মুখে রুচি নেই, তাঁরা দু-তিন চামচ ডেউয়ার রস ও সঙ্গে একটু লবণ–গোলমরিচগুঁড়া মিশিয়ে দুপুরবেলা ভাত খাওয়ার আগে খেতে পারেন। এক সপ্তাহ খেলেই মুখে রুচি আসবে।
• পেটের সমস্যায়: অনেকের বিভিন্ন প্রকার খাবার খেলেও পেট পরিষ্কার হয় না, অস্বস্তিতে ভোগেন। তাঁরা কাঁচা ডেউয়া কেটে ৮-১০ গ্রামের মতো বেটে গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ওই পানি খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটা সকালে বাসি পেটে খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের কারণে পেটব্যথা কমাতে সহায়তা করে ডেউয়া।
• দাঁতের সমস্যায়: ডেউয়ার ভিটামিন সি ত্বক, চুল, নখ, দাঁত ও মাড়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে। তাই এই ফলকে ক্যালসিয়ামের আধার বলা হয়।
• ডিহাইড্রেশনে: কোনো কারণে বমি বমি ভাব অনুভব হলে তা খেলে দ্রুত সেরে যায়। অত্যধিক তৃষ্ণা নিবারণে কাজ করে টকজাতীয় ফল ডেউয়া।
• ত্বকের সুরক্ষায়: ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয়ে মসৃণ ভাব ফিরে আসে। অর্থাৎ শরীরের শুষ্ক ভাব দূর হয়। ডেউয়ায় ট্যানিন থাকে এবং এটি ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়, যা আপনি এ ফল খেলেই পাবেন।
• লিভার সমস্যায়: লিভারজনিত নানা অসুখ নিরাময়ে সাহায্য করে ডেউয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদের মধ্যে কিছু ফার্মাকোলজিক্যাল কার্যকলাপ পাওয়া গেছে এবং এগুলো হলো প্রদাহবিরোধী, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিক্যানসার ও অ্যান্টি-এইচআইভি বৈশিষ্ট্য, লিভারের সতেজতা হিসেবে কাজ করে।
• স্মৃতিশক্তি বাড়াতে: এ ফল খেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে। মরিচ, লবণ, চিনি দিয়ে ডেউয়ার ভর্তা খেলে সানস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
এ ছাড়া ডেউয়ায় বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্ত চলাচলে সহায়তা করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। ইউনানি চিকিৎসায় ফল ও ফলের বীজ ব্যবহার করে থাকে। ফল ও গাছের রসকষে অনেক রাসায়নিক দ্রব্য আছে, যেমন ট্যানিন, স্টেরোকিটোন ও আরটোস্টটিনোন।
হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই দেশি ফলগুলো। তাই ফল সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আশা উচিত।