নগরজীবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ এক অনুপেক্ষণীয় বাস্তবতা। এর সঠিক ব্যবহার ও যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এড়ানো যাবে অনেক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এমন গ্যাজেট, যা বাতাস থেকে তাপ ও আর্দ্রতা সরিয়ে ভেতরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ুর গুণমান নিয়ন্ত্রণ করে। এসি গরম আবহাওয়ায় আরাম প্রদান করে, দূষণকারী ও অ্যালার্জেন ফিল্টার করে বায়ুর গুণমান উন্নত করে এবং তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস করে শরীরের উপকার করে। সাধারণভাবে এটাই বলা হয়ে থাকে।
অফিসে হাজারো কাজের চাপ থাকলেও এসি দেয় আরাম। মনে হয়, সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা বাড়ির সব কাজ সেরে ঘরে ঢুকে এসি চালিয়ে বসেন। অথচ এটি হিতে বিপরীত হতে পারে।
এসিতে মাত্রাতিরিক্ত সময় থাকলে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এসি ব্যবহারে আমরা সাময়িকভাবে আরাম বোধ করে থাকি। যদিও এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক এবং সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।
যে ধরনের ক্ষতি হতে পারে
- অ্যালার্জি: অনেকে হয়তো জানি না, এসি ইউনিট সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে ধুলা এবং অন্যান্য অ্যালার্জেন সঞ্চালন করতে পারে; এতে করে অ্যালার্জির প্রভাব বাড়তে পারে। এসব কণা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে হাঁচি, কাশি ও চোখ দিয়ে পানি পড়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
- মাথাব্যথা: দীর্ঘসময় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকার কারণে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া এসি রুম থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় তাপমাত্রার ক্রমাগত পরিবর্তন হওয়ায় শরীরে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। অত্যধিক গরম অনুভূত হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ কারণে ক্রমাগতভাবে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। একসময় সমস্যা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
- শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া: ক্রমাগত তাপমাত্রার ওঠানামার সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে হয়। এটা শরীরের জন্য বাড়তি চাপ এবং অস্বস্তির কারণও। এর প্রভাব পড়ে মনের ওপর; এ কারণে একটা সময় কিছুই করতে ভালো লাগে না। কাজ করতে ইচ্ছা করে না। সারাক্ষণ অস্বস্তি কাজ করে।
- শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়া: মাত্রাতিরিক্ত সময়ের জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকলে সতেজ বাতাসের অভাবে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। এর কারণে ক্লান্তি আর অলসতা ভর করে। আমাদের শরীরে কোষের প্রধান খাবার অক্সিজেন। সেখানে অক্সিজেনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। আবার দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা পরিবেশের থাকার কারণে শরীর উষ্ণতা চায়। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি খরচের কারণেও শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে। আবার হজমেরও সমস্যা সৃষ্টি করে অক্সিজেনের ঘাটতি।
- শ্বাসজনিত সমস্যা: ঠান্ডা বাতাস শ্বাসতন্ত্রকে জমিয়ে দেয়; ফলে প্রদাহ হয় এবং শ্লেষ্মা উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসের দীর্ঘক্ষণ থাকলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়। হাঁপানি আর ব্রঙ্কাইটিস দেখা দিতে পারে।
- ডিহাইড্রেশন: এসির বাতাস শরীর থেকে আর্দ্রতা অপসারণ করে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা বাড়ায়। আর্দ্রতা হ্রাসের শুষ্ক মুখ, তৃষ্ণা ও প্রস্রাবের বেগ হ্রাসের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- চোখের সমস্যা: এসির শুষ্ক বাতাস চোখের সমস্যা করতে পারে। লাল ভাব, চুলকানি ও অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষ করে কন্টাক্ট লেন্স পরিধানকারী ব্যক্তিদের জন্য আরও খারাপ। আর্দ্রতার অভাবে চোখ শুকিয়ে যেতে পারে, চোখের প্রতিরক্ষামূলক টিয়ার ফিল্ম হ্রাস করে। দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।
- পেশিব্যথা: ঠান্ডা বাতাসে পেশি সংকুচিত হতে পারে। পেশি শক্ত হয়ে যায় ও ব্যথা হতে পারে। এমনকি দীর্ঘসময় থাকলে পেশির খিঁচুনি ও অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষ করে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা অনেকের ফ্রোজেন শোল্ডারও হতে পারে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র