জীবনযাপন, পত্রিকায় প্রকাশিত, স্বাস্থ্য টিপস্‌

না খেয়েও ভালো থাকা যায়

উপোস বা না খেয়ে থাকা। এর ফলে হজমতন্ত্র বিশ্রাম পায়। শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু এই ফাস্টিংয়েরও আছে নিয়ম। তাই ফাস্টিং করতে হলে নিতে হবে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ।

ইদানীং ফাস্টিং আধুনিক সমাজে সুস্থ থাকার নতুন ট্রেন্ড। বিশেষ করে আধুনিক খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যারা শরীরটাকে বিষিয়ে তুলেছেন, তারা এখন সুস্থতার জন্য ফাস্টিংকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সভ্যতার আদিতে মানুষ হাতের কাছে এত রকমারি খাবারদাবার মোটেই পেত না। হয় শিকার করে, নয়তো বনজঙ্গল ঢুঁড়ে ফল-পাকুড় জোগাড় করতে হতো। একজন মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে খাদ্য জোগাড় করতে বেরিয়ে পড়ত, যতক্ষণ না সে কোনো খাবারের সন্ধান না করতে পারত, ততক্ষণ তার খাবার খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মানুষ খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখার কোনো ব্যবস্থাও জানত না। তখন মানুষ একবেলায় খেতে পারত। তাতেই শরীরে খাদ্য জোগানের চাহিদা অনুযায়ী ফিট থাকত। দিনে দিনে মানুষ আগুনে পুড়িয়ে খাবার, কৃষি শিখে খাদ্য রান্না করা শিখেছে। বিবর্তনের ধারায় মানুষের খাদ্য পাওয়ার ওপর শরীরের গঠন, মেজাজ ও লাইফস্টাইল গড়ে উঠেছে।

প্রতিদিন একজন মানুষকে এক কেজি ওজনের জন্য ২২ কিলোক্যালরি গ্রহণ করতে হয়। এই হিসেবে একজন মানুষের ওজন ৮০ কেজি হলে তাকে প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে ১৭২০ কিলোক্যালরি। পুষ্টিবিদদের মতে, দিনে সবচেয়ে কম কিলোক্যালরি গ্রহণ করা বলতে বোঝায় ৮০০-১২০০। আর এর চেয়ে কম খাবার গ্রহণ করলে সেটাকে বলে ফাস্টিং।

আমরা এখন খাবারের বিচার করি স্বাদের বিবেচনায়, পুষ্টিগুণ বা প্রয়োজনীয় বিষয়টি আমাদের কাছে মুখ্য থাকে না। শুধু মজাদার খাবার গ্রহণ করতে পারলেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খাদ্যের মাজাদার গুণ বিবেচনা না করে খাই। আমরা মূলত ঝাল, লবণাক্ত, তৈলাক্ত, বেশি মিষ্টি খাবার পছন্দের তালিকার ওপরে রাখি। প্রোটিন আমাদের খাদ্যতালিকায় সবার ওপরে থাকে; যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, তেল ও ময়দার আধিক্য খাবারই বেশি। এসব খেলে শরীরে চাহিদার সব মিনারেল পূরণ হয় না, কিন্তু অধিক প্রোটিনের কারণে শরীরে চর্বি জমতে থাকে; যার পরিণতি অসুস্থতা।

তাই আমরা যতটা খাবার খাই, তার একটা ভগ্নাংশেই শরীরের চলে যায়। বাড়তি খাবারই আমাদের নানাবিধ রোগভোগ ও অতিরিক্ত মেদের কারণ। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় শরীর খাবারের জোগান না পেলে হজমে আমূল পরিবর্তন আসে। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য সব পশুপাখিকেই উপোসের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়, তাতে শরীর মোটেই ভেঙে পড়ে না। উল্টো গ্লুকোজের জোগানে ঘাটতি পড়লে লিভার ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে কিটোন তৈরি করতে আরম্ভ করে। সেটাই শরীরকে এনার্জি হিসেবে কাজে লাগায়। ফলে আপনার ওজন কমতে আরম্ভ করে, শারীরিক সুস্থতা বাড়ে।

ফাস্টিং করে যে উপকার পাওয়া সম্ভব

• কম ক্যালরি গ্রহণের জন্য ওজন কমে
• ইনসুলিন প্রতিরোধে কার্যকর
• রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
• হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে ও পুনরুদ্ধার করে
• চর্বি পুড়িয়ে দেহের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে
• দীর্ঘ জীবন লাভের রাস্তা খুলে দেয়
• নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়
• হজমশক্তি ভালো থাকে
• শরীরে কর্মচঞ্চলতা ফিরে আসে
• ত্বক ভালো রাখে, লাবণ্য ফিরে আসে
• চুলে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে
• হাড়ে শক্তি সঞ্চারিত হয়
• উন্নত সেলুলার মেরামতের কাজ করে

ফাস্টিংয়ের নিরাপদ পদ্ধতি

ফাস্টিং করার বেশ কটি পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে একটি জনপ্রিয় কৌশল হলো ১৬ ঘণ্টা ফাস্টিং। যেমন আপনি রাতের খাবার সন্ধ্যা সাতটায় খেয়ে পরের দিন দুপুর ১২টায় খাওয়া অর্থাৎ দিনের খাবার মোট আট ঘণ্টার মধ্যেই খাওয়া। আর বাকি সময় শুধু পানি পান করে কাটানো।

বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে, সারা দিনে একবার খাওয়া, এটা একটি কষ্টকর হলেও কার্যকর। এখানে খেয়াল রাখতে হয় এক বেলা যেহেতু খাবেন, তাই সব ভিটামিন, মিনারেল যাতে থাকে, তার জন্য ফল, সবজি সালাদ, বিন, বাদাম, ডিম গুরুত্বপূর্ণ আইটেম। এখন সব ফুডচার্টে কার্বকে পরিহার করার কথা বলা হয়ে থাকে।

আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে সপ্তাহে এক দিন বা দুদিন কোনো ধরনের মাছ, মাংস, ভাত, রুটি না খেয়ে শুধু ফলের জুস, লেবুজল খেয়ে সারা দিন পার করা। এ ক্ষেত্রে যেটা জানা দরকার যে আপনি কী কী ওষুধ সেবন করছেন, তার ওপর ভিত্তি করে কোন কোন ফল আপনার জন্য ভালো, সেটা বোঝা। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলে শুধু লেবুজল প্রতি ঘণ্টায় একবার করে আট থেকে দশ ঘণ্টা লেবুজল খেয়ে সারা দিন পার করে পরের দিন স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসা।

যারা ফাস্টিং শুরু করতে চান, তাদের অবশ্যই জানতে হবে যে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে কোনো সমস্যা হবে কি না, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন নির্ভর জীবন যাপন করে থাকেন। তবে মনে রাখবেন, এ বিষয়টি নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। এখনো গবেষণা চলছে। এ পর্যন্ত যা ফল পাওয়া গেছে, তা ইতিবাচক। এই ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই একবার আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। সেই সঙ্গে যদি বাড়তি মিষ্টি আর প্রসেসড খাবার বন্ধ করতে পারেন, তা হলে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।

Leave a Reply