জীবনযাপন, পত্রিকায় প্রকাশিত, বিশ্ব স্বাস্থ্য, সবজি, স্বাস্থ্য টিপস্‌

ছোট স্প্রাউট বড় পুষ্টি!

স্প্রাউট বা অঙ্কুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। অনেক রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি শরীরে পুষ্টির জোগান দেয় স্প্রাউট।

অঙ্কুরিত বীজ আকারে ক্ষুদ্র হলেও পুষ্টিতে বড়। পাঁচ–সাত দিন বয়সী বীজ স্প্রাউটগুলো পরিপক্ব গাছের চেয়ে বেশি পুষ্টির জোগান দিতে পারে। ছোলা, মুগ ডাল, সয়াবিন, শিমের বীজের স্প্রাউট নিরামিষ খাবারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অঙ্কুরিত খাবার খেয়ে থাকেন।

উদ্ভিদের খাবারে ফাইটেট থাকে, যা দস্তা, লোহা ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ; মানুষের কাছে ফাইটেট ভেঙে ফেলার জন্য খুব ভালো এনজাইম নেই, কিন্তু অঙ্কুরোদ্গম প্রক্রিয়া উদ্ভিদের এনজাইমগুলোকে সহজেই হজম করতে সাহায্য করে, যা খনিজগুলোকে অবাধে শোষণ করতে দেয়। যার কারণে স্প্রাউট খাওয়ার প্রতি মানুষ ঝুঁকছে। অঙ্কুরিত বীজ ও সবুজ শাকসবজিতে বেশি ভিটামিন সি, ভিটামিন বি আর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা উচ্চ ঘনত্বে শরীরে শোষণের কাজ করে।

স্প্রাউট কী

স্প্রাউট হলো বীজ থেকে অঙ্কুরিত এবং খুব অল্প বয়সী উদ্ভিদ। এই অঙ্কুরোদ্গম প্রক্রিয়াটি সাধারণত বীজগুলোকে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে শুরু হয়। তারপর ভিজিয়ে রাখা বীজগুলো তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সঠিক সংমিশ্রণে জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে বড় হতে থাকে। পুষ্টিগুণে বীজের চেয়ে বেশি হয় এবং শরীরে জীবন্ত খাবারের প্রভাবে একটি বিশাল শক্তিবলয় তৈরি হয়।

স্প্রাউটের পুষ্টি

ছোলার এক কাপ স্প্রাউটে আছে ক্যালোরি ৮ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রামের কম, কার্বোহাইড্রেট ১ গ্রাম, ফাইবার ১ গ্রাম, চিনি ১ গ্রামের কম। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেট, বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন কে-এর একটি বড় উৎস এই স্প্রাউট। এই ভিটামিন সুস্থ হাড়ের বৃদ্ধি, সঠিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধা ও অন্যান্য অনেক শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

স্প্রাউট খাওয়ার উপকারিতা

রক্তে শর্করার মাত্রা কমে: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খেতে পারেন। এটি তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। প্রথমত, অঙ্কুরিত না হওয়া বীজ ও শস্যের তুলনায় স্প্রাউটে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কম থাকে, যা ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। স্প্রাউটের পুষ্টি এনজাইমের উপস্থিতির সঙ্গে মিলিত হয়, যা ফলস্বরূপ শরীরে কার্বোহাইড্রেট ভেঙে দেয়। পুষ্টি সহজেই কোষে প্রবেশ করে। ইনসুলিনের ওপর প্রভাব তৈরি করে না।

হজমশক্তি উন্নত করে: স্প্রাউট হজমস্বাস্থ্যের উন্নতি করে। বীজ অঙ্কুরিত করলে এতে থাকা ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই ফাইবারের বেশির ভাগই অদ্রবণীয়। ফলে এটি পেটে দ্রবীভূত হয় না। এটি একটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হয়ে ওঠে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো একটি স্থিতিশীল, স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পেট ফোলা ভাব ও গ্যাসের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। স্প্রাউট কোষ্ঠকাঠিন্যের উত্তম পথ্য।

হার্ট ভালো রাখে: স্প্রাউট হার্টের জন্যও উপকারী। স্প্রাউট ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও স্থূলকায় ব্যক্তিদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়; যার কারণে হার্ট ভালো থাকে।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি: শীতকালে, সর্দি-কাশি ও অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। স্প্রাউটে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক থাকলে এই সমস্যা হয়ই না।

মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত: স্প্রাউট মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। স্প্রাউটে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য উপকারী যৌগ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

স্প্রাউট তৈরির নিয়ম

১০০ গ্রাম ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে পানি ফেলে দিয়ে ভালো করে ছোলা ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একটি বাটিতে ছোলাগুলো রেখে দিয়ে ৬ ঘণ্টা পরপর ভালো করে ভিজিয়ে নিতে হবে। এইভাবে তিন দিনের মধ্যে দেখবেন ছোলা থেকে অঙ্কুর বের হচ্ছে; আরও দুই দিন এভাবে রাখলে পুরো অঙ্কুর বের হয়ে অঙ্কুরিত হয়ে যাবে। সেটাই প্রতিদিন নাশতায় খেতে হবে। তিন দিন অন্তর এই স্প্রাউট তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া ইদানীং স্প্রাউট তৈরির মেশিন পাওয়া যায়; সেটাও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ছোলা, মুগ, মেথি, সয়াবিনের স্প্রাউট করা যায়। তবে ছোলার স্প্রাউট আমাদের জন্য ভালো।

লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

ছবি: পেকজেলসডটকম

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *