রোগ-ব্যাধি

কারপাল টানেল সিন্ড্রোম : কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

কারপাল টানেল সিন্ড্রোম একটি সাধারণ অবস্থা, যা কব্জির প্রদাহজনিত রোগ। এক্ষেত্রে হাতের কব্জি, হাতের তালু ও আঙুলগুলো অসাড় হয়ে যায়, ব্যথা, ঝিনঝিন করে, কখনও ফুলে যায়। হাতের তালুকে কারপাল টানেল বলা হয়ে থাকে। কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম এক হাতে বা উভয় হাতেই হতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কারপাল টানেল সিন্ড্রোম সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ দিকে যায় এবং স্নায়ুর ক্ষতি করে। মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যার প্রবণতা বেশি হয়। বিশেষ করে, গর্ভাবস্থায় প্রায়ই এই সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। কারপাল টানেল সিনড্রোমের কারণ এটি মিডিয়ান স্নায়ুতে চাপের কারণে ঘটে এবং অতিরিক্ত প্রদাহের কারণে ফুলে যায়।

কারপাল টানেল সিনড্রোমের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু সাধারণ কারণ হল-
ক) উচ্চ রক্তচাপ
খ) গর্ভকালীন সময়ে ও মেনোপজের পর নারীদের এই সমস্যা বেশি হতে পারে
গ) থাইরয়েডের সমস্যা
ঘ) ডায়াবেটিস
ঙ) কব্জিতে কোনও সমস্যা
চ) অটোইমিউন ডিসঅর্ডারস (আর্থ্রাইটিস)
ছ) কী বোর্ড বা মাউস ব্যবহার করার সময় কব্জি বিশৃঙ্খল ভাবে রাখা
জ) দীর্ঘ সময় ধরে বারবার একই কাজ
ঝ) চাপ দিয়ে কাজ করা
ঞ) কিছুজনের ক্ষেত্রে এটি বংশগত হতে পারে কারপাল টানেল সিনড্রোমের লক্ষণ

কারপাল টানেল সিনড্রোমের প্রথম লক্ষণ হল,
কব্জিসন্ধিতে ব্যাথা বা অস্বস্তী লাগা, বেশী সময় কাজ করতে না পারা। হাতের পেশীতে খুব ঘন ঘন ব্যাথা হওয়া এবং হাত অসাড় মনে হওয়া, হাতে শক্তি না পাওয়া। অন্যান্য লক্ষণগুলি হল –
ক) হাতে ব্যথা এবং জ্বালা অনুভব করা
খ) আপনার হাতের আঙুলে অসাড়তা এবং ব্যথা
গ) হাতের পেশীগুলিতে দুর্বলতা
ঘ) রাতে কব্জি ব্যথা যা ঘুমের ব্য়াঘাত ঘটায়

কারপাল টানেল সিনড্রোমের ঝুঁকি
ক) মহিলাদের এই সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি থাকে পুরুষদের তুলনায়।
খ) এই অবস্থাটি সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায়।
গ) লাইফস্টাইল এবং অভ্যাস যেমন বেশি লবণ গ্রহণ, ধূমপান, হাই বডি মাস ইনডেক্স (BMI) কারপাল টানেল সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ঘ) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বাতের কারণে বেশি হতে পারে।
ঙ) দীর্ঘ সময় ধরে বারবার একই কাজ করার কারণেও এর ঝুঁকি বাড়ে।

কারপাল টানেল সিন্ড্রোমের নির্ণয়
এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক সর্বপ্রথম রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন তারপর শারীরিক পরীক্ষা করেন। শারীরিক পরীক্ষাটি হাত, কব্জি, কাঁধ এবং ঘাড়ের উপর হয়ে থাকে। হাতের পেশীগুলির, আঙ্গুলগুলির শক্তিও পরীক্ষা করা হয়।

কারপাল টানেল সিনড্রোমের চিকিৎসা
এই অবস্থায় লক্ষণগুলির তীব্রতা এবং ব্যথার মাত্রার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। এই রোগের উপষমের জন্য শল্যচিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি এবং আরও অন্যান্য ধরনের চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসার কয়েকটি বিকল্পের নিম্নরূপ –
ক) স্টেরয়েড
খ) ফিজিওথেরাপি
গ) অকুপেশনাল থেরাপি
ঘ) যোগা বা শরীরচর্চা
ঙ) আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি
চ) সার্জারি

যদি কাজ করার সময় আপনার হাতগুলি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে প্রতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নিন এবং আপনার হাত প্রসারিত করুন, হাতের ভঙ্গিতে মনোযোগ দিন। এগুলি ছাড়াও এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ এড়িয়ে চলুন যা আপনার কব্জিকে এই সিন্ড্রোমের দিকে ঠেলে দেয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *