পত্রিকায় প্রকাশিত, ফল, বিশ্ব স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য টিপস্‌

এক জামরুল তিন কমলা সমান সমান!

জামরুল খেতে পানসে। এর প্রকৃত কারণটা অবশ্য অনেকেই জানেন না। যে বছর প্রকৃতিতে প্রচণ্ড রোদ পড়ে, সে বছর জামরুল হয় মিষ্টি। আর ছায়ার জামরুল খেতে পানসে। জামরুলের মিষ্টতা বেশি না হলেও এই ফল খেতে সুস্বাদু। জামরুল সাদা, হালকা সবুজ, গোলাপি, লাল এবং কালো বর্ণেরও হয়। জামরুল আজকাল লাল রং ধারণ করে মিষ্টি হতে যাচ্ছে।

সহজলভ্য জামরুল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে খনিজ পদার্থ রয়েছে কমলার তিন গুণ এবং আম, আনারস ও তরমুজের সমান। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ লিচু ও কুলের সমান এবং আঙুরের দ্বিগুণ। আয়রনের পরিমাণ কমলা, আঙুর, পেঁপে ও কাঁঠালের চেয়েও বেশি। ফসফরাসের পরিমাণ আপেল, আঙুর, আম ও কমলার চেয়ে বেশি।

জামরুলে জলীয় অংশ ৮৯.১ শতাংশ, ক্যারোটিন আছে ১৪১ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ আছে ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ আছে ০.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ৩ মিলিগ্রাম। ক্যালরি শক্তি: ৫৬ প্রোটিন ০.৫ থেকে ০.৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.২ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.১ থেকে ১.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.২ থেকে ০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯ থেকে ৪৫.২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১.৭ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৪৫ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩৪.১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪.১ মিলিগ্রাম, কপার ০.০১ মিলিগ্রাম, সালফার ১৩ মিলিগ্রাম, ক্লোরিন ৪ মিলিগ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ৩৯ কিলোক্যালরি।

জামরুল খাওয়ার উপকারিতা

• হজমশক্তি বৃদ্ধি: জামরুলের উচ্চ মাত্রার ফাইবার হজমে দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে কোনো সমস্যাই থাকে না। এর বিচি ডায়রিয়া প্রতিরোধে অনেকটা ওষুধের মতো কাজ করে।

• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: জাম্বোসাইন একধরনের ক্ষারজাতীয় উপাদান। এটি শর্করাকে চিনিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সুস্থ মানুষের দেহে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধা ঠেকিয়ে দিতে দক্ষ জামরুল। কাজেই জামরুল খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে যাবে না।

• ক্যানসার প্রতিরোধ: জামরুলে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের অনেক উপাদান। তাই নিয়মিত জামরুল খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

• কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: ফাইবার ও পুষ্টি উপাদানের সম্মিলিত উপস্থিতি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকর। অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকিও কমে আসে উল্লেখযোগ্য হারে। কার্ডিওভাসকুলারবিষয়ক জটিলতা হ্রাস পায়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক আর করোনারি রোগের ঝুঁকিও আপনাকে দুশ্চিন্তায় রাখবে না।

• মস্তিষ্ক ও লিভারের জন্য: মস্তিষ্ক ও লিভারের সুরক্ষায় জামরুল টনিক হিসেবে কাজ করে। একটি ফল যা লিভার ও মস্তিষ্কের সুরক্ষায় কাজ করে। এ ছাড়া হেপাটোপ্রোটেক্টিভ নামক একটি উপাদান আছে, যা লিভার কোষ ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।

• বাতে উপকারী: জামরুল ভেষজ গুণসমৃদ্ধ ফল। বাত নিরাময়ে এটি ব্যবহার করা হয়। মৌসুমে যত দিন পাওয়া যায়, তত দিন খেতে হয়।

• চোখের কালি দূর করতে: অঘুম কিংবা দুশ্চিন্তায় যাঁদের চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, তাঁরা সেই কালি দূর করতে নিয়মিত একটি করে জামরুল খেয়ে দেখতে পারেন।

• রোগ প্রতিরোধ: জামরুলের কার্যকর ও শক্তিশালী উপাদানগুলো জীবাণু এবং ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকায় এ ফল। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।

• বিষাক্ত উপাদান পরিষ্কার: প্রতিনিয়ত শরীরে বিষাক্ত উপাদান ঘুরে বেড়ায়। শত শত বছর ধরে দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়ে বের করে দিতে জামরুলের কদর রয়েছে। লিভার আর কিডনির বিষ দূর করে বিপাকক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতে যেন এক অব্যর্থ টোটকা এই জামরুল।

আমাদের দেশি ফলগুলোর গুণগুলো এমনই। মৌসুমের শুরুতেই ফলগুলো নিয়মিত খাওয়া উচিত, বিশেষ করে যত দিন পাওয়া যায়। ফল খাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকালে নাশতায় ফল খাওয়া এবং দুপুরের আগে, রাতে ফল খাওয়া ঠিক নয় বলে আমাদের প্রাচীন বিদ্যা বলে থাকে।

লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ

ছবি: সেলিনা শিল্পী ও শামীমা মজুমদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *