ডাইট চার্ট, ন্যাচারোপ্যাথি, পত্রিকায় প্রকাশিত, সবজি, স্বাস্থ্য টিপস্‌

শীত এসেছে, এখন সময় কেভাস প্রোবায়োটিকের

কেভাস

শীত এলেই আমাদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। দেহের ভেতরের গরম কমতে থাকে, যার দরুন হজমে সমস্যা শুরু হয়। অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আর প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসতে থাকে, ফলমূলের জায়গায় সবজি হয় বেশি। গাছ হয়ে পড়ে ফলশূন্য। গাছেরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাতা ঝরানোর।

শীতের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমাদের খাদ্যচক্রেও একটু পরিবর্তন প্রয়োজন। আজ একটি বিষয় বলি, শীতের যে পানীয়টা আগে খাওয়া শুরু করবেন, সেটার নাম হচ্ছে কেভাস (Kvass)। এটা আসলে বিট গাজিয়ে তৈরি পানীয়। আমাদের কাছে এই পানীয় বেশি পরিচিত নয়। কিন্তু এটা পান করা শুরু করলে শীত মৌসুমটা খুব ভালো কাটবে।

পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় কেভাস। ইউরোপীয়রা এটা বেশি খায়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে এর স্বাস্থ্যকর দিক। এটা খেলে পেটের প্রোবায়োটিক বাড়বে, হজমশক্তি বাড়বে, লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। বিশেষ করে যাঁরা ফ্যাটিলিভারসংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি চমৎকার একটি পানীয়। শরীরে পর্যাপ্ত প্রোবায়োটিক না থাকলে হজমের নানা সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, ক্যান্ডিডা, অটোইমিউন রোগ ও ঘন ঘন সর্দি হতে পারে।

পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় কেভাস। ইউরোপীয়রা এটা বেশি খায়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে এর স্বাস্থ্যকর দিক। এটা খেলে পেটের প্রোবায়োটিক বাড়বে, হজমশক্তি বাড়বে, লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। বিশেষ করে যাঁরা ফ্যাটিলিভারসংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি চমৎকার একটি পানীয়। শরীরে পর্যাপ্ত প্রোবায়োটিক না থাকলে হজমের নানা সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, ক্যান্ডিডা, অটোইমিউন রোগ ও ঘন ঘন সর্দি হতে পারে।

পূর্ব ইউরোপের মানুষ প্রথমে কেভাস পান করা শুরু করেছিল। এটি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোয় সবচেয়ে জনপ্রিয়। এখন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া আর ইউরোপের অন্যান্য অংশের মানুষও খাওয়া শুরু করেছে এর গুণের কারণে।
যাঁরা রাশিয়ায় গেছেন, তাঁরা দেখে থাকবেন, বিভিন্ন জুস বার ও মস্কোর রাস্তার পাশে কেভাসের ব্যারেল দেখা যায়। এটি হজমের টনিক হিসেবে খাওয়া হয়। কারণ, বিট গাজনের কারণে পেটের কিছু খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তারে সহায়তা করে।

প্রোবায়োটিকের দুর্দান্ত উৎস

কেভাসকে প্রোবায়োটিক পানীয় বলা হয়। কারণ, কেভাস অন্ত্রের ট্র্যাক্টের উন্নতি করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য আনে। কেভাস খাদ্যের প্রোবায়োটিকগুলো অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরার বৈচিত্র্যকে বৃদ্ধি করে ও বিপাকে সহায়তা করে। এটি প্রোবায়োটিক–ঘাটতির কারণে পেটের সমস্যা সমাধানে দারুণ কার্যকর। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা ও খাদ্য অ্যালার্জির প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
একসময় আমাদের খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক ছিল। কারণ, তখন আমাদের দেশের মাটি ছিল উৎকৃষ্ট; রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত। এই মাটি থেকে উন্নত মানের ফসল পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা সেসব নষ্ট করে ফেলেছি। তাই এখন আমাদের প্রোবায়োটিক দরকার। অনেকে সাপ্লিমেন্ট খান। এর পরিবর্তে তাঁরা কেভাস পান করতে পারেন।

চমৎকার লিভার ক্লিনজার

কেভাস তৈরিতে বিট লাগে আর বিট হচ্ছে অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও পটাশিয়ামসমৃদ্ধ। এটি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধে লড়াই করে, যা বার্ধক্যপ্রক্রিয়া কমিয়ে দেয় ও লিভারজনিত রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। কেভাস ও বিট প্রাকৃতিকভাবে গলব্লাডার পরিষ্কার করে পিত্তরসপ্রবাহ উন্নত করার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে টক্সিন অপসারণ করতে পারে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পারফেক্ট ব্লাড টনিক

বিটের রঞ্জকগুলোতে পাওয়া যায় ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট বেটালাইনস। বেটালাইনসের অভাবে চেহারায় নানা দাগ তৈরি হয়। এই বেটালাইন লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। কেভাস রক্তে অ্যালকালাইন বাড়ায়। এ জন্য একে রক্তের টনিক বলে। কারণ, রক্ত অ্যাসিডিক হয়ে গেলে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি হয়; কেভাস সেই ঘাটতিপূরণ করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণের কারণে কেভাস প্রাকৃতিকভাবে ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটরুটকে প্রদাহরোধী থেরাপিউটিক চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

বিট ও কেভাস মূল্যবান পুষ্টিতে সমৃদ্ধ

বিটে ভিটামিন সি বেশি থাকায় কেভাস আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং ঠান্ডায় ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে ম্যাঙ্গানিজ খুব বেশি থাকায় হাড়, লিভার, কিডনি ও অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বাড়ায়। বিট ও কেভাসে ফোলেট নামে বি ভিটামিনও রয়েছে, যা জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

কেভাস তৈরির পদ্ধতি

প্রথমে আধা কেজি বিটরুট ভালো করে ধুয়ে ওপরের খোসা ছাড়িয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। এরপর দুই লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি কাচের বোয়ামে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বিটরুটগুলো মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর এক টেবিল চামচ পিঙ্ক সল্ট এই পানিতে দিয়ে ভালো করে নাড়বেন। তারপর বোয়াম ঢাকনা দিয়ে ভালো করে ঢেকে দেবেন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তিন দিন রেখে দিতে হবে। তিন দিন পর বোয়ামের মুখ খুলে একটু নাড়িয়ে দিতে হবে। এভাবেই হয়ে যাবে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক কেভাস। তিন দিনে লবণ, বিট ও পানির মিশ্রণে গাজনপ্রক্রিয়ায় তৈরি হয়ে যায় প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক পানীয় কেভাস।

সেবনের নিয়ম

প্রতিদিন যেকোনো সময় খাওয়ার আগে এক কাপ কেভাস পান করতে হবে। এক মাস পান করার পরই অনুভব করা যাবে শরীরে কী ঘটেছে। অদ্ভুতভাবে আপনার অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটা কেবল যাঁরা কিডনি সমস্যায় আছেন, তাঁরা খেতে পারবেন না। অনেক ক্ষেত্রে বিট পচে যেতে পারে, তাই বোয়াম খুলে সেটা দেখা যাবে।

লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

ছবি: পেকজেলসডটকম ও উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *