Uncategorized, সবজি

বেগুনকে জাতীয় সবজি করার সুপারিশ

বেগুনকে জাতীয় সবজি করার সুপারিশ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১, কভিড-১৯ অতিমারীতেও বছরব্যাপী নানান উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে বছরটি উদযাপন করা হচ্ছ। স্বাধীনতার পর আয়তনে ছোট কিন্তু জনসংখ্যায় বৃহত্তম রাষ্ট্রটির অর্জন কম নয়, খাদ্যনিরাপত্তাসহ বৈশ্বিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক মান সূচকে অভাবনীয় উন্নতি একটি অনন্য বিস্ময়! দেশের অর্থনীতির ভিত এখন অন্য মাত্রায় উপনীত হচ্ছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেশের ক্রমাগত উন্নতি কোনো অবস্থাতেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

পৃথিবীতে দেশের পরিচিতি অন্য মাত্রায় উপস্থাপন করার জন্য তার নিজস্ব সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ঐতিহ্যগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতে হয়। নানা ধরনের সূচক আছে, যেমন প্রাণী, উদ্ভিদ, প্রাচীন স্থাপনা, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। ক্যাঙ্গারুর নাম এলে মানসপটে ভেসে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার নাম, আবার কিউইউ ফলের নাম এলে নিউজিল্যান্ডের কথা মনে পড়ে। জলপ্রপাতের নাম এলে নায়াগ্রা বা কানাডার নাম আর হিংস্র প্রাণী বাঘের নাম মনে হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলাদেশ সমার্থক। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের পর পরই পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতীক ঘোষণা করেছে, যেমন জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন বলধা গার্ডেন, জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় মাছ ইলিশ—এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় ঐতিহ্যের সূচকগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার যে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বাংলাদেশের জাতীয় সবজির নাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি বা কারো নজরে আসেনি; কেন দেয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়। অথচ এ দেশে বহুল প্রচলিত, প্রচলিত, অপ্রচলিত, বাণিজ্যিক চাষ মিলে ২০০টিরও বেশি সবজির ব্যবহার হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার জোগান দিয়ে আসছে এবং খাদ্য সংস্কৃতির অন্যতম উপকরণ। বিজ্ঞজনরা মনে করেন অন্যান্য খাতের সূচকের মতো বাংলাদেশের একটি সবজিকে জাতীয় সবজি হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। এতে কোনো আর্থিক সংশ্লেষ নেই, আছে আত্মিক সংশ্লেষ ও ঐতিহ্যের স্বীকৃতি।

সবজির জাতীয় স্বীকৃতির ঘোষণা শুধু বাংলাদেশেই প্রথম হবে এমন নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের জাতীয় সবজি আছে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের পাম্পকিন বা মিষ্টিকুমড়া, চীনের বুক-চুই বা চীনা বাঁধাকপি, ভারতের মিষ্টিকুমড়া বা কদু, কানাডার রুবাব, পাকিস্তানের ঢেঁড়স, চিলির পিন্টু বিন। এভাবে দেখা গেছে যে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠীর একটি জাতীয় সবজি আছে, এমনকি অনেক দেশের তিন-চারটি সবজি মিলে একটি জাতীয় সবজি ডিশ আছে। ফলে বাংলাদেশের জাতীয় সবজি থাকাটা অতিরজ্ঞন বা বিলাসিতা নয়, বরং এটা জাতীয় ঐতিহ্যের অনন্য দৃষ্টান্ত।

এখন আসা যাক কোন সবজিটিকে জাতীয় সবজি হিসেবে বিবেচনায় আনা উচিত এবং জাতীয় সবজি নির্বাচনের মাপকাঠি কী? জাতীয় সবজি চিহ্নিতকরণের কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত দলিল বা সূচক নেই, তবে ইউনেস্কো ২০০৮ সালে জাতীয় হেরিটেজ/নিদর্শন ঘোষণা করার বেশকিছু উপাদান চিহ্নিত করেছে। সে ধরনের উপাদান জাতীয় সবজি নির্বাচনে সূচক হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

যেমন প্রথম সূচক হলো কোন সবজি সর্বসাধারণের কাছে অসাধারণ সর্বজনীনতা আছে তা যাচাই করা। সেই অসাধারণ সর্বজনীনতা যাচাই করতে সবজিটির ব্যুত্পত্তিসহ আদিম অবস্থা, গুণমান, পুষ্টিমান, বৈচিত্র্য, দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশগত অবস্থায় উৎপাদন দক্ষতা, জাতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপকতা, সর্বোপরি ভোক্তাশ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া দরকার।

বাংলাদেশ একটি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ, দেশটি বিশ্বসেরা নানান ঐতিহ্যে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করেছে। রকমারি ফসল, নানা প্রাণী, নানা মাছ এখানে প্রাকৃতিকভাবেই বিশেষায়িত। যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল বা বসতি কোথায় তা স্মরণ করলে বাংলাদেশের নাম আসে। বেগুন ঠিক তেমনি সবজি। এর হরেক আকার, আকৃতি, রঙ রয়েছে এবং বাহারি বেগুনেরও অন্যতম আবাসস্থল বাংলাদেশ। বিজ্ঞানী ভেভিলব পৃথিবীর সব উদ্ভিদের শ্রেণীকরণ করেছেন, সেখানে বেগুনের উত্পত্তি ইন্দু-বার্মা অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেজন্য বাংলদেশে এর ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। বেগুনকে ইংরেজিতে ডাকা হয় ডিম্ব উদ্ভিদ বা এগপ্লান্ট, ব্রিনজাল, ওভারজিন। ব্রিটিশ শাসকরা ডিম্বাকৃতি জনপ্রিয় সাদা বেগুন দেখে এমন নামকরণ করেছিলেন, যদিও ইংরেজিতে এর নাম ওভারজিন। আমরা এটিকে ইংরেজিতে ব্রিনজাল নামে ডাকি। অনেকে আবার নেতিবাচকভাবে বলে থাকেন—‘যার নাই কোনো গুণ তা হলো বেগুন’। আসলে বাংলায় একে বাগুন নামে ডাকা হতো, পরে তা বেগুন হয়েছে। অর্থাৎ বাহারি গুণ যার, তার নাম বাগুন কিংবা বেশি গুণ যার তা হলো বেগুন। বেগুনকে পর্তুগিজরা এখান থেকেই ইউরোপে প্রবর্তন করে, যেমন মেসো আমেরিকার টমেটো রোমানরা ইউরোপে স্থানান্তর করেছিল। ব্রিনজাল শব্দটি এসেছে পর্তুগিজ শব্দ বেরিনজালা থেকে। যাহোক, এগুলো হলো উত্পত্তি ও নামকরণের ঐতিহাসিক তথ্যাদি।

দেশে বেগুন বৈচিত্র্যের পার্থক্য বোঝাতে বলা হয়, ভাষার পার্থক্য হয় প্রতি ২০ কিলোমিটার অন্তর, তেমনি বেগুনের পার্থক্য দেখা যায় প্রতি ২৫ কিলোমিটার অন্তর। রঙ ও আকারের প্রতি ভোক্তার পছন্দের কারণে এমন পার্থক্য দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন স্থানীয় জাতের বেগুনের চাষ হয়, যেমন লাফফা (ময়মনসিংহ), তল্লা বা তাল (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ), খটখটিয়া (রংপুর), পোতা (চট্টগ্রাম), ইসলামপুরী (জামালপুর), দোহাজারী (চট্টগ্রাম), রাখাইন (পটুয়াখালী), ঝুরি (মুক্তাগাছা), শিংনাথ (দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চল), চেগা (যশোর), উত্তরা (রাজশাহী), মেন্টাল (বগুড়া), বোতল (জামালপুর), মুক্তকেশী (মানিকগঞ্জ), ভোলানাথ (নরসিংদী), বোম্বাই (নরসিংদী), ডাব (নেত্রকোনা বা পটুয়াখালী), ঈশ্বরদী লোকাল, ফুলি, হাজারী, ভাঙ্গুড়া, সাহেব বেগুন, ঝুমকা, কাঁটা বেগুন ইত্যাদি। এসব নামকরণের পেছনে আবার কিছু গল্পও আছে। যেমন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বেগুন তালাকৃতির, তাই তাল বেগুন। এ তাল বেগুন উপহার হিসেবে অনেক অসাধ্য সাধন করে আসছে। শিংয়ের মতো আকার তাই শিংনাথ, যা দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত পাওয়া যায়। নরসিংদীর ভোলানাথ ও বোম্বাই জাতের বেগুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ঝুরি বেগুন সম্ভবত দেশের সবচেয়ে ছোট বেগুন। বেগুন চাষে অঞ্চলভিত্তিক পছন্দ দেখা যায়, যেমন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ সাদা বেগুন বা গোলাপি রঙের উত্তরা বেগুন ছাড়া অন্য বেগুন তেমন পছন্দ করে না। চট্টগ্রামে হালকা সবুজ রঙের পোতা বেগুনই চলে, যশোরে চেগা বেগুন ছাড়া অন্য বেগুন চাষও করা হয় না।

ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

বেগুনের নানা রকম পদ হয়। যেমন বেগুন পোড়া, বেগুন ভর্তা, বেগুন ভাজা। মাছে-ভাতে বাঙালি আর মাছ রান্নার অন্যতম সবজি বেগুন। কেউ কেউ বেগুন দিয়ে ভেজিটেবল মিট তৈরি করে খান। বেগুনের দোলমা খুবই সুস্বাদু। বেগুনের আচারের কথা শুনলে জিহ্বায় পানি আসে। সেদ্ধ বেগুন কাঁচামরিচ, ধনিয়া পাতা ও সরিষার তেলে ভর্তা যে কি স্বাদ, যারা খেয়েছেন তারা তা অনুধাবন করবেন। আদি যুগে বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও বৌদ্ধ যুগে ফিরে গেলে দেখব নিরামিষ ছিল খাদ্যতালিকার অন্যতম অংশ। সেই নিরামিষে বেগুন হলো অন্যতম উপাদান। অন্তঃসত্ত্বা নারীর সাত মাস সময়ের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান বা সাধভক্ষণ উপলক্ষে কয়েক ধরনের নিরামিষের কথা জানা যায়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো মুলা-বেগুন-উড়ুম্বের ফল দিয়ে নিরামিষ। পঞ্চব্যঞ্জনের অন্যতম উপকরণ বেগুন। আমাদের খাদ্যতালিকায় বেগুন যে কত আদি সবজি তা চর্যাপদ কিংবা মঙ্গল কাব্যগুলোয় দেখা যায়। আমাদের ষোলো শতকের কবি মুকুন্দরাম বাঙালি রমণীর রন্ধন তালিকার শাকসবজির বৈচিত্র্যের উপমা দিতে গিয়ে প্রথমেই বাগ্যনের (বেগুন) নাম উল্লেখ করেছেন। আট শতকের পণ্ডিত খনা বেগুন দিয়ে নানান শ্লোক উল্লেখ করেছেন। বেগুনের গুণ কত, তা বোঝা যায় এ আনাজ নিয়ে গল্পের বাহার দেখলেই। বাঙালির অতিপরিচিত কত গল্পেই যে এসেছে এ আনাজের কথা। যেমন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর সেই ‘টুনটুনি আর বিড়ালের কথা’য় টুনটুনি পাখি গৃহস্থদের ঘরের পেছনের বেগুন গাছের পাতায় ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে তার বাসা বেঁধেছিল। আবার মনে পড়ছে ত্রৈলোক্যনাথের কথা। তার ডমরুচরিতের একটা গল্পে মরা কুমিরের পেটের ভেতরে বসে এক নারী বেগুন বিক্রি করেছিলেন। হ্যাঁ, সেই বেগুনের কথাই বলছি। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ বছর আগেও সংস্কৃত সাহিত্যে বেগুনের সরাসরি ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে, আছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে।

আধুনিক বিজ্ঞানানুযায়ী বেগুনে রয়েছে বহু রকরের পুষ্টি, যা অন্য কোনো সবজিতে পাওয়া যায় না বা থাকলেও পরিমাণে কম।

মানুষের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের ৪৭টি উপাদানের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রমাণ আছে। বেগুনে তার বেশির ভাগই কম-বেশি আছে। যেমন এনথোসায়ানিন ফাইটোক্যামিকেলস, যা বেগুন আছে। এতে নাউসিনের পরিমাণ বেশি এবং এই নাউসিনের অক্সিডেন্ট শোষণক্ষমতা অন্য অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফেনলস আছে, যেগুলো শরীরের অক্সিডেন্ট শোষণক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। বেগুনের ঔষধি গুণেরও শেষ নেই, বেগুন একেবারে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই গায়ে মেখে দিলে চুলকানি ও চর্মরোগ সারে। যুগ যুগ ধরে বেগুন নানা রকম আয়ুর্বেদিক ওষুধের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসেছ। বেগুনের রসে মধু মিশিয়ে খেলে কফজনিত রোগ দূর হয়। আবার মধ্যযুগে বন্য বেগুন খাইয়ে পাগল করারও তথ্য পাওয়া যায়। কচি ও শাঁসালো বেগুন খেলে জ্বর সারে। শরীরে ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান বের করতে সাহায্য করে বেগুন। আপনার খাবারের তালিকায় যদি নিয়মিত বেগুন রাখেন তাহলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে। এমনকি কিডনির পাথর নাকি গুঁড়ো করে দিতে পারে এ বেগুন। যদিও এ তথ্যগুলোর আধুনিক ক্লিনিক্যাল প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

বেগুন চাষ পদ্ধতির প্রাচীনতা আট শতকের খনার বচন থেকে বোঝা যায়, ‘বলে গেছে বরার বৌ, দশটি মাসে বেগুন রো, চৈত্র মাস দিবে বাদ। ইথে নাই কোন বিবাদ, পোকা ধরলে দিবে ছাই। এর চেয়ে ভালো উপায় নাই, মাটি শুকালে দিবে জল, সকল মাস পাবে ফল।’ বেগুন উৎপাদনের ব্যাপকতা বিচার করলে দেখা যায়, দেশের এমন কোনো জায়গা পাওয়া যাবে না, যেখানে বেগুন চাষ হয় না। যখন বেগুনের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়নি, তখন থেকে এখনো দেশের প্রতিটি বসতবাড়িতে এক-দুটি বেগুনের গাছ আছেই। বসতবাড়ি, সমতল ভূমি, পাহাড়, বৈরী পরিবেশ তথা লবণাক্ত, সাময়িক জলাবদ্ধতা, খরাপ্রবণ এলাকা—সব জায়গায় বেগুন হয়, এমনকি অধুনা ছাদ বাগানেও বেগুন অন্যতম সবজি। দেখা গেছে বেগুন ৮ ডেসিমল/মোল পর্যন্ত লবণাক্ত জমিতে স্বাভাবিক ফলন দেয়, যেখানে টমেটো ৪ ডেসিমল/মোল লবণাক্ততার পর চাষ করা দুরূহ। ঠিক তেমনি জলাবদ্ধতা বা খরার বেলায়ও তা দেখা যায়। ফলে বেগুন আমাদের ইকোলজিক্যাল ফসল, ভৌগোলিক পরিমাপক। দেশে বেগুনের চাহিদা অন্য যেকোনো সবজির তুলনায় বেশি। পরিসংখানে দেখা গেছে দেশে ৫০ বছরের বাণিজ্যিক উৎপাদন বেড়েছে ১ দশমিক ৫ গুণ, আবার চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে চার গুণ। বেগুন রফতানি হয় পৃথিবীর ৪০টি দেশে এবং প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেগুন চাষ করে লোকসান হয় এমন তথ্য নেই। বেগুন নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, হতে থাকবে। বাংলাদেশ জিএমও বেগুন বাণিজ্যিক ছাড় দিয়ে পৃথিবীর পরিবেশ সচেতন মানুষদের কাছে বিতর্কিত হয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী যে দেশে যে ফসলের উত্পত্তি ও বৈচিত্র্য বেশি, সে দেশে সে ফসলের জিএমও জীববৈচিত্র্য রক্ষা প্রটোকল-বিরোধী।

ভোক্তার কাছে জনপ্রিয়তার বিচারে বেগুন শীর্ষে, গৃহিণী বাজারের থলে হাতে ধরিয়ে দিয়ে যে সবজিটির নাম বলেন তা হলো বেগুন। আমাদের আদি ফসল বেগুন আধুনিক খাদ্যতালিকায় যেমন জনপ্রিয়, আদিকালেও তেমনি ছিল, তা আমাদের কবিতায়, গল্পে, প্রবন্ধে, উপাখ্যানে, বিজ্ঞান সংলাপসহ নানা উৎসে বিধৃত। আমাদের কৃষ্টিতে ও সংস্কৃতিতে বেগুনের নাম মিশে আছে, যা অন্য কোনো সবজি ফসলের বেলায় পাওয়া যাবে না। বেগুন চাষের আধিক্যের জন্য বাংলাদেশের বেগুনবাড়ী রেলস্টেশন আছে। আবার ভায়োলেট একটি রঙের নাম, আর বেগুনের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এ রঙের বাংলা নাম দেয়া হয়েছে বেগুনি। আবার রমজান মাসে বেগুনি নামের রেসিপি মেনুতে না থাকলে ইফতারই অসম্পূর্ণ মনে হয়। রমজান মাসে বেগুনের দাম বেড়ে গেলে তা রাজনৈতিক রূপ পায়। বেগুন বহুল ব্যবহূত, ধনী-গরিব সব মানুষের কাছে সমাদৃত, উত্কৃষ্ট সবজি ও ঐতিহ্যের ফসল। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যেকোনো বিচারে বেগুনই হওয়া উচিত দেশের জাতীয় সবজি। এটাই সচেতন মানুষের প্রত্যাশা। বাংলাদেশের জাতীয় সবজি হিসেবে বেগুনকে মর্যাদা দিলে বিশ্বে বেগুন নিয়ে আরো সচেতনতা তৈরি হবে, বাংলাদেশ নিয়ে আরো ইতিবাচক আগ্রহ, উৎসাহ বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে দেশের কৃষি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বেগুনকে জাতীয় সবজি ঘোষণার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে, যা হবে সুবর্ণজয়ন্তীর বছরের অন্যতম সেরা জাতীয় ঐতিহ্যের স্বীকৃতি।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

5 thoughts on “বেগুনকে জাতীয় সবজি করার সুপারিশ

  1. Pingback: jeux de casinos
  2. Pingback: prednisone 20mg
  3. Pingback: singulair 5mg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *