ন্যাচারোপ্যাথি, পাতা

বাসকের ঔষধি গুণ

বাসক বা ভাসক বা বাকাস বা বাসা বা আলোক-বিজাব (বৈজ্ঞানিক নাম: Justicia adhatoda) একান্থাসি পরিবারের জাস্টিসিয়া গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম।[১] এর হিন্দি নাম আড়ষা, এটি অটরুষকের বিবর্তিত শব্দনাম। ক্ষুপজাতীয় গাছ হলেও প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট উচু হয়; আষাঢ়-শ্রাবণে সাদা ফুল হয়।[২] বাসক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

বাসক দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ঔষধি গুল্ম ঔষধ হিসাবে প্রয়োগ:

প্রথমেই বলে রাখি বাসক, নিম প্রভৃতি কয়েকটি ভেষজকে কাঁচা ব্যবহার করতেই বলা হয়েছে; তবে হাওয়ায় শুকিয়ে নিলে একই গুণ পাওয়া যায়।

১. অম্লপিত্ত রোগে: এ রোগে দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে আসে অম্লশূর, হৃদরোগ, ব্লাডপ্রেসার এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত। এই অম্লপিত্তকে বন্ধ করতে হলে ৭ থেকে ৮ গ্রাম বাসক ছাল ৪ কাপ আন্দাজ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে নিয়ে সেই জলটা দুই তিন বারে প্রতিদিন খেলে বিশেষ উপকার হয়।

২. ক্রিমিতে: বয়সানুপাতে মাত্রা মতো উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বাসক ছালের ক্বাথ করে খাওয়ালে ক্রিমিও মরে যায়।

৩. রক্তশ্রুতিতে: রক্তপিত্তজনিত যে কোনো জায়গা থেকে রক্তস্রাবে বাসক ছাল ও পাতা (১০ থেকে ১১ গ্রাম) একসঙ্গে সিদ্ধ করে সেই ক্বাথের সঙ্গে চিনি বা মিছরির সিরাপ মিশিয়ে খাওয়ালেও রক্তস্রাব বন্ধ হয়।

৪. শ্বাসরোগ: নাতুন বা পুরাতন যাই হোক না, উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ক্বাথ প্রস্তুত করে সিরাপের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শ্বাসের উপদ্রবেরও উপশম হয়। অনেক ক্ষেত্রে শ্বাস রোগের সঙ্গে শরীরে একজিমাও থাকে; কারণ ঔপসর্গিক রক্তদৃষ্টির দ্বারা ঐ দুটি রোগ এককালেই দেখা দেয়; এটার দ্বারা সে দু’ক্ষেত্রের প্রভাবও কমে যায়।

৫. হাঁপের টানে: বাসকের শুকনা পাতার চুরুট বানিয়ে বা বিড়ি করে অথবা কলকেতে সেজে ধোঁয়া টানলেও বেশ উপশম হয়।

৬. শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে: যাদের গায়ের স্থান বিশেষের ঘামে দুর্গন্ধ হয়, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস লাগালে ওটা হয় না।

৭. গায়ের রং ফর্সা করতে: কে না চায় ফর্সা হতে এই বাসক পাতার রসে দুই-এক টিপ শঙ্খ ভষ্ম মিশিয়ে গোসলের দুই-তিন ঘণ্টা পূর্বে গায়ে লাগাতে হয়, এর দ্বারা শ্যামবর্ণও উজ্জল শ্যামবর্ণ হয়।

৮.অর্শের বলির যন্ত্রণা: থেঁতো বাসক পাতা অল্প গরম করে পুটুলি বেধে মলদ্বারে সেক দিলে যন্ত্রণা ও ফোলা দুইয়েরই উপশম হয়।

৯. বসন্তের সংক্রমণে: পাড়াজুড়ে বসন্ত, এর হাত থেকে বাঁচতে গেলে বাসক পাতা সিদ্ধ জল খাওয়ার জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রত্যহ খেতে হয়, তাহলে আর সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে না। আয়ুর্বেদ মতে এর দ্রব্যশক্তিটি রোগ হওয়ার কারণটাকেও প্রতিহত করে।

১০. জীবাণু নাশক: এক কলসী জলে ৩ থেকে ৪টি বাসক কুচি করে কেটে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে সেই জল জীবাণুমুক্ত হয়। শুধু তাই বা কেন, পুকুরের পোকামাকড় মারতেও সেকালে বাসক পাতা জলে ফেলা হতো।

১১. টিউমার হয়েছে কি না বুঝতে: চরক সংহিতার যুগে বাসক পাতার রস খাইয়ে নির্ণয় করা হতো।

রাসায়নিক গঠন:
(a) Vasicine.
(b) 1-peganine.
(c) Small amount of essential oil.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ
১. মমতাজ বেগম, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৩৭-১৩৮।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *