জীবনযাপন, পত্রিকায় প্রকাশিত, মশলা, স্বাস্থ্য টিপস্‌

ঔষধিগুণসম্পন্ন দারুচিনিতেও আছে আসল–নকলের সংকট

দারুচিনি স্বাদ ও ঔষধি গুণাবলির জন্য বিশ্বের প্রাচীনতম মসলাগুলোর একটি। শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত দারুচিনি। তবে আপনি কি জানেন, আমরা যে দারুচিনি খাই বা চিনি, সেটা আসল দারুচিনি নয়! দারুচিনির দুটো জাত—একটি ক্যাসিয়া, আরেকটি সিলন নামে পরিচিত। আসল দারুচিনি হচ্ছে সিলন, যা বাজারে খুঁজে পাওয়া কঠিন। মনে রাখবেন, আসল আর নকল দারুচিনির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো ‘কুমারিন’ নামে পরিচিত একটি প্রাকৃতিক যৌগের স্তর।

আসল দারুচিনির চেয়ে নকল দারুচিনিতে কুমারিন রক্ত পাতলা করার ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ গুণ বেশি। উচ্চমাত্রার কুমারিন বিষাক্ততার কারণ হয়ে আপনার লাভের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে এবং লিভারের ক্ষতি হতে পারে। সেই সঙ্গে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও হতে পারে। অবশ্য আসল দারুচিনি খেতে পারলে মিলবে নানা উপকার।

আসল দারুচিনি চেনার উপায়

আসল দারুচিনির ছাল পাতলা এবং বেশি কোঁকড়ানো হবে। যেমন সিলন। আবার ক্যাসিয়াটা হলো কোঁকড়ানো কম, কিন্তু একটু মোটা। তাই ওষুধ হিসেবে খেতে চাইলে দেখেশুনে কিনতে হবে।

দারুচিনি এনজাইম সক্রিয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা শরীরকে সুস্থ হাড় তৈরি করতে এবং বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দারুচিনিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে।
পলিফেনল নামে পরিচিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের একটি বড় উৎস দারুচিনি। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে রসুন ও ওরেগানোর তুলনায় দারুচিনিতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে।

দারুচিনির অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং এডিডি ও এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের সাহায্য করতে পারে।

শক্তিশালী প্রদাহরোধী

দারুচিনি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী বলে আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে। দারুচিনি স্বাস্থ্যকর হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের একটি উচ্চ উৎস। দারুচিনি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগীদের ব্যথা ও ফোলা কমাতে পারে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

প্রাকৃতিক ইনস্যুলিন হিসেবে সুবিদিত দারুচিনি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। দারুচিনি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লাইসেমিক সূচকের উন্নতি করতে পারে।

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাকের মতো হৃদ্‌রোগ হওয়ার আশঙ্কা পাঁচ গুণ বেশি। মনে রাখবেন, ইনসুলিন শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। দারুচিনি কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে পারে। দারুচিনি গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমতে পারে। এ ছাড়া দারুচিনি রক্ত পাতলা করে হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে পারে।

আলঝেইমার ও পারকিনসন্সের ঝুঁকি কমায়

দারুচিনি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে; ফলে আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করে বা এর উপসর্গ কম করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে পারকিনসন্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের পরিবর্তনগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে দারুচিনি। এ ছাড়া প্রদাহের ঝুঁকি কমাতে পারে, যা মস্তিষ্কের টিউমার, মেনিনজাইটিস, আলঝেইমার ও পারকিনসন রোগের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের কারণ হতে পারে।

সংক্রমণরোধী

দারুচিনি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ফলে কার্যকরভাবে সংক্রমণ, সর্দি ও ফ্লুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। দারুচিনি তেল খাদ্যবাহিত রোগজীবাণু প্রতিরোধ করতে পারে। ঠান্ডা ও ফ্লুর উপসর্গ যেমন কাশি ও গলাব্যথাও কমাতে পারে।

আইবিএস ও পিএমএসে কার্যকর

দারুচিনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম (আইবিএস) বা হজমসংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি ও উপসর্গ হ্রাস করে। পাশাপাশি প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রম (পিএমএস) বা মাসিকপূর্ব উপসর্গ যেমন ক্র্যাম্প, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া দূর করতে পারে।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ওজন কমায়

 

দারুচিনির প্রাকৃতিক যৌগ ‘সিনামালডিহাইড’ নামে পরিচিত। এটা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং বিপাককে উন্নত করতে পারে। দারুচিনির রক্তকে পাতলা করে; এতে করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধী

দাঁতের ক্ষয় রোধ করে ও মাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাউথওয়াশ ও টুথপেস্টে দারুচিনি তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন এক চা-চামচ দারুচিনির গুঁড়া খাওয়া যেতে পারে। এর বেশি খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। চায়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যাবে। কিংবা এক ইঞ্চি পরিমাণ ছাল চিবিয়েও খাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *